লেখিকা পরিচিতি- জীবন চলমান। চলমান জীবন কখনো থেমে থাকে না। যতই তাকে চেপেচুপে ধরে রাখা হোক না কেন সে চলবেই। মনটা হয়তো কখনো অবদমিত হয়। পসরায় ধাবমান হয়। মানুষের প্রতিভাও তেমন। এটাকে চেপে রাখতে চাইলেও সে যেকোন উপায়েই প্রকাশ হতে চাইবেই। যার রক্তে লেখা আছে কবিত্ব। যাঁর বাবা আজীবনই সাহিত্য সেবা সহ সাহিত্য আলোচনা করে গেছেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গেছেন বই ক্রয় করতে, বাঘা বাঘা সাহিত্যিকের বই পড়েছেন আজীবন আর নিজের মতামতগুলো সন্তানদের মনের উপর প্রভাব ফেলেছেন অল্প অল্প করে, তাঁদের জাগিয়ে তুলেছেন সাহিত্য রসে—সেই ইব্রাহীম বিশ্বাস আজ আর বেঁচে নেই ঠিকই, কিন্তু তাঁর সন্তানগুলো ঠিকই ধীরে ধীরে সুসাহিত্যিক হয়ে বেড়ে উঠেছেন, সুসাহিত্যিক হয়ে উঠেছেন ইব্রাহীম বিশ্বাসের নাতি-নাত্নিগণও। শিরীন বানু চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য সংগঠন থেকে কবিতার জন্যে ক্রেস্ট পান। তাছাড়া বিশ্ব সাহিত্য সংঘ ২০১৭ পুরষ্কারে ভূষিত হন। তার স্বামী মৃত এহসানুল হক রতন একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে ঘড়ে ফেরেন। তিনিও একজন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক মোনা মানুষ ছিলেন। কুষ্টিয়ার স্থানীয় পত্রিকা থেকে তার লেখা ছাপা হয়। একজন ব্যবসায়ীক হয়েও তিনি তাঁর কাজের ফাঁকে ফাঁকে লেখালেখি অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর ছোট ভাই লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফেরদৌস আহমেদ নীরু দেশের একজন রত্ন। সাহিত্য সেবা রসে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। প্রতিভাযশা একজন সেরা আবৃত্তিকার তিনি, বাংলায় সংস্কৃতি নিয়েও তিনি পড়াশুনা করেছেন। শিরীন বানুর মেঝ বোন মতিয়া বান দুরারোগ্য ক্যান্সারে কিছুদিন আগে মারা গেলেও তিনি আজীবন সাহিত্য ভাবনা ও জ্ঞানের প্রতি দুর্বলতা থেকে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন বড় একটা লাইব্রেরি। বড় বোন আতিয়া বানু ভারতে স্মরিয়ামে ইংরেজি বিভাগে পড়াশুনা শেষ করেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে প্রায়। তিনিও সাহিত্য সেবার প্রতি ভীষণ আকৃষ্ট। সাত ভাই-বোনের মধ্যে শিরীন বানু হলেন সেজো। মেঝো না হযে সেজো হলে কি হবে—এই শিরীন বানুর মেয়ে বেলাটা কেটেছে দারুণ ও দুরন্ত অভিযানের মধ্যে দিয়ে। তিনি ছুটে চাক থেকে মধু ভাঙা, গাছে উঠা সহ নানা রকম সে দুরন্তপনা। তাঁর ভয়ে নিজ গ্রামের লোকজন বেশ তটস্থ থাকতেন—শিরীন আসছে শিরীন আসছে বলে সকলেই শান্ত হয়ে যেতো। সেই শৈশবের দুরন্তপনা এখন না থাকলেও অন্যরকম দুরন্তপনা তাঁর মনে এখন কাজ করেই চলেছে। কোথাও সভা-সেমিনার হলে কি সাহিত্যানুষ্ঠান হলে তাঁর ডাক পড়ে। বড় হয়েও তিনি থেমে নেই, নিজ ব্যবসা-বাণীজ্য একজন মেয়ে হয়েও সামাল দিয়ে হস্তে তৈরি কুটির শিল্পের প্রতি দুর্বল হয়ে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে দেশের সন্মান অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতিতেও তিনি জড়িত। একজন মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করলে যে সমাজের নানাদিক থেকে উপকার করা যায়—শিরীণ বানু তার জ্বলন্ত উদহারণ। ১৪ই অগাস্ট ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি যশোর জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলীম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম ফাতীমা। সেকেলে মহিলা হলেও তিনি কখনো ঝাড়-ফুঁকে বিশ্বাসী ছিলেন না, এমনকি কোন প্রকার ধর্মীয় গোড়ামী আজও এই ৮৫ বছর বয়সেও পাওয়া যায় নি। তাদের পুরো পরিবারটি নামাজী। আসুন আমরা লেখিকা শিরীন বানুর জন্যে মন খুলে দোআ করি, তিনি যেনো তাঁর লেখনীর খুর-ধার অব্যাহত রাখতে পারেন।