লেখাটা আমি লিখিনি। ফেসবুকে এক ছোট ভাইয়ের টাইম লাইন থেকে নিয়েছি। লেখাটা পড়ে একটু অবাক হলাম। তাই এখানে শেয়ার দিলাম।

image source
তবে এবারের কেসের ফিরিস্তিটা আমি নিজ হাতেই লিখছি। এটাকে ঠিক কেস বলা যাবে না। কারণ এটা কোনো চুরি, খুন, ছিনতাইয়ের ঘটনা নয়। বরং একটু ভিন্নরকম, একটু অদ্ভূত।
ব্যাপারটা একজন মানুষকে নিয়ে। আমার মেসোমশাই অর্থাৎ তোপসের বাবা পাঁড় ব্রাজিল সমর্থক, আর তোপসের মধ্যে আর্জেন্টিনা প্রেমটা প্রবল। স্বাভাবিকভাবেই মেসোর কাছে পেলে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়, কিন্তু তোপসের কাছে সেটা মেসি। আমি আবার খেলা নিয়ে খুব একটা কৌতূহলী না। কিন্তু এবার তোপসের জোড়াজোড়িতে সেটাও হতে হল।
ও বলল, ‘‘ফেলুদা তুমিই বলো তো মেসির থেকে অন্য কেউ ভালো কি করে হয়’’? আমি বললাম, ‘‘দেখ তোপসে, আমি অত খেলা-টেলা ফলো করিনা। আর তাছাড়া আমি লজিক ছাড়া কখনো চলিনি, তাই এটার উত্তরও লজিকালি দিতে হবে, সেজন্য আমাকে ভাবতেও হবে। ভাবার সময় দে’’। তোপসে বলল,‘‘ঠিক আছে, কিন্তু তাড়াতাড়ি করতে হবে। বাবাকে মুখের উপর উত্তর না দিয়ে ছাড়ছি না’’। আমি আবার বললাম,‘‘কেন? ভাবার পর আমার উত্তর তো মেসোমশাইয়ের দিকে মানে পেলেও হতে পারে’”। তোপসের আত্মবিশ্বাসী উত্তর,‘‘হবে না দেখো’”। মেসোমশাই এসব দেখে শুধু মাথা নাড়ালেন আর হাসলেন।
কি আর করার! সব ছেড়েছুড়ে আমিও নেমে পড়লাম এই পাগলামিতে। খেলা নিয়ে অত আগ্রহী না হলেও পেলে যে ব্রাজিলের হয়ে তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছে সেটা জানতাম, মেসি জাতীয় দলের হয়ে কোনো ট্রফিই জেতেনি। শুরুতেই তাই পিছিয়ে মেসি। কিন্তু এটাও ঠিক যে বিশ্বকাপ তো ব্রাজিলের ওই দলের অন্য খেলোয়াড়রাও জিতেছেন। ঠিক করলাম স্ট্যাট কিংবা রেকর্ড সাথে নিয়েও একটু ভিন্ন পথে এগোবো। দুই যুগের তুলনা করব সময়, প্রতিপক্ষ, সামর্থ্য, চাপ এই বিষয়গুলো দিয়ে। সেই অনুযায়ী কাজে লেগেও গেলাম।
ইন্টারনেট ঘেঁটে অনেক অনেক তথ্য-উপাত্ত বের করলাম।
সময় দিয়েই শুরু করলাম। পেলে খেলেছেন ১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ১৯৭০ এর দশকের কিছুটা সময় পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে সব ধরণের অফিসিয়াল রেকর্ডে দেখা গেল কেবল সান্তোসের হয়ে তাঁর গোল ৬৬৫ ম্যাচে ৬৪৬টি। তাঁরই সময়ে ইউরোপের জায়ান্ট ক্লাব বেনফিকায় খেলা পর্তুগিজ ব্ল্যাক প্যান্থার ইউসেবিওর ক্যারিয়ার গোল অফিসিয়ালি ৫৭৫ ম্যাচে ৫৮০টি। আর মেসি তো এখনো খেলে যাচ্ছে। বার্সেলোনার হয়ে এখন অবদি তাঁর গোল ৬০০+ ম্যাচে ৫০০+টি।
ব্যাপারটা খটকা জাগাল। এবার প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবলাম। ব্রাজিলিয়ান লিগ তো আর ইউরোপিয়ান লিগের মতো শক্তিশালী নয়। বেনফিকা, বার্সেলোনা যেখানে নিয়মিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলে বিশ্বের সেরা দলগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে সেখানে পেলে সান্তোসের হয়ে খেলে তুলনামূলক কম শক্তির দলগুলোর সাথে খেলছেন। তাহলে কার জন্য গোল করাটা বেশি কঠিন? উত্তর পেয়েও গেলাম। অবশ্যই ইউসেবিও এবং মেসি।
আসা যাক সামর্থ্যের ব্যাপারে। তারপর পেলের করা ১২৮১ গোলের কথা মাথায় এল। বসে গেলাম সেটা নিয়ে। আর্টিকেলগুলো ঘাঁটতে গিয়ে প্রচন্ড শক পেলাম। যা পড়লাম তাতে গা রীতিমতো রিনরিন করে উঠল।
এই গোলগুলোর মধ্যে ৫২৬ টি গোলই ছিল আনঅফিসিয়ার ফ্রেন্ডলি এবং ট্যুর ম্যাচের।পেলে সেইসব ম্যাচ এবং গোল পর্যন্ত নিজের ক্যারিয়ারে হিসেব করেছেন যে ম্যাচ কিনা তিনি খেলেছিলেন মিলিটারি কম্পিটিশনের সিক্সথ গ্রেড দলের বিপক্ষে! শুধুমাত্র গোলই যদি একজন খেলোয়াড়কে বিচার করার মাপকাঠি হয় তাহলে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হবেন ইয়োসেপ বাইকান। বাইকান তাঁর ক্যারিয়ারে ১ হাজার ৪ শ ৬৮টি গোল করেছিলেন।
পেলে যে ম্যাচগুলোতে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন সে ম্যাচগুলো কোন প্রতিযোগিতায়, কার বিপক্ষে, কোথায় ছিল সেটা বের করতে গিয়ে তো আমার চক্ষু আরো চড়কগাছ।
পেলে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৮টি গোলও করেছেন। একটি ম্যাচে সান্তোস ১১-০ গোলে বোটাফোগোকে হারিয়েছিল। পেলে করেছিলেন ৮ গোল। এই বোটাফোগো ব্রাজিলের বোটাফোগো নয়। এই বোটাফোগো দলটি মূলত ক্রিস্কয়ার চার্চের যাজক এবং কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত একটি শৌখিন ফুটবল দল। আরেকটি ম্যাচে সান্তোস জুভেন্টাস কে হারায় ১০-১ গোলে, যে ম্যাচে পেলের গোল ছিল ৫টি। কিন্তু কথা হচ্ছে এই জুভেন্টাস ইতালিয়ান জুভেন্টাস না। এই জুভেন্টাস ব্রাজিলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাম না জানা খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত জুভেন্টাস। এরা কখনো ব্রাজিলের ফুটবলীয় কাঠামোর ৫ম স্তরের উপরে উঠতে পারেনি। সেই দলের বিপক্ষে করা গোলও কিনা পেলে হিসেব করেছেন!!
এক্ষেত্রে মেসির জোচ্চুরির বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। কারণ তাঁর করা গোলের হিসাব তাঁকে রাখতে হয় না। সেটি এখন হাজার হাজার ওয়েবসাইটই করে থাকে। সেখান থেকেই জানলাম মেসি সবচেয়ে বেশি গোল করেছে যে দলগুলোর বিপক্ষে তাঁর মধ্যে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, সেভিয়া, আর্সেনালের মতো ক্লাবগুলো।
পেলের খেলা নিজ চোখে দেখিনি তাই ইউটিউবই ভরসা। মেসির খেলা স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। ইউটিউবে পেলের স্কিল, ড্রিবলিং, খেলার ভিডিওগুলো দেখলাম। কিন্তু কোনোভাবেই মেসির করা একই কাজগুলোর সাথে পেলেকে মিলাতে পারছিলাম না। পেলের প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল একেকজনের শরীর থেকে কেউ শক্তি উৎপাদন করার ইঞ্জিন বুঝি খুলে নিয়েছে। একজনকে কাটানোর পরই সে হাল ছেড়ে দিচ্ছে। আর খুব একটা নামকরা কাউকে তো দেখতেই পাইনি। আর গোলকিপার একেকজন যেন ছিলেন ঈশ্বরের বাঁ হাতের তৈরি। কোনদিকে ডাইভ দিতে হবে সেটাই যেন জানে না!
অন্যদিকে মেসির সময়ের কথা চিন্তা করলাম। রামোস, ক্যানাভারো, কারভালহো, পেপে, বোয়েটাং, কিয়েল্লিনি, টেরি, সিলভা, কোম্পানি, ভিদিচ, ফার্ডিনান্ডদের মতো বিশ্বসেরা ডিফেন্ডারদেরকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে করা ড্রিবলিং কিংবা গোলগুলো করা কি সম্ভব হতো পেলে কে দিয়ে? ক্যাসিয়াস, চেক, নয়্যার, ভ্যান ডার সারদের মতো অবিশ্বাস্য গোলকিপারদের বিরুদ্ধে কি কখনো খেলেছেন পেলে? কোনোভাবেই উত্তর হ্যাঁ আসছে না।
কিংবা মাত্র ১৮ বছর বয়সে রিয়াল মাদ্রিদের মতো বিশ্বসেরা দলের বিপক্ষে করা হ্যাটট্রিক, ১৯ বছর বয়সে ৬ জনকে কাটিয়ে করা গোল এসব কেবল মেসিকে দিয়েই সম্ভব।
এতসব কান্ডকারখানা নিয়ে ভাবলে মাথা এমনিতেই হ্যাং হয়ে যায়। বিরক্তি কাটাতে একটা চারমিনার ধরালাম। বাতাসে ধোঁয়ার রিং ছাড়তে লাগলাম।
হঠাৎ করে তোপসে এসে রুমে হাজির। জিগেস করল,‘‘ফেলুদা, কদ্দূর এগুলে? আর কি কি পেলে বলো তো’”। আমি উত্তর দিলাম,‘‘তোপসে, চোর যখন ধরা পড়ে কি করে জানিস? পালানোর উপায় খুঁজে। কিন্তু আমি এখন এমন এক চোরের সন্ধান পেয়েছি যার পালানোর কোনো পথই নেই’”। তোপসের চোখ দু’টো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। উত্তেজিত হয়ে উঠে বলল,‘‘পেলে কে নিয়ে কিছু পেয়েছ যেটা ওর বিরুদ্ধে যায়’’। ‘‘তদন্ত শেষ হবার আগেই যদি বিচারক রায় দিয়ে দেয় তাহলে সে বিচারে আর নৈতিকতা রইল কই?’’ আমার সাফ জবাব। গোমড়া মুখ করে চলে গেল ও।
চারমিনারের শেষ হয়ে যাওয়া টুকরোটা ফেলে দিয়ে আবার আর্টিকেলগুলো যাচাই করতে বসলাম।
চাপের ব্যাপারটা সামনে আনলাম। পেলের সময় ব্রাজিলিয়ান লিগের একচ্ছত্র অধিপতি ছিল সান্তোস। আর ব্যক্তিগতভাবে পেলে কে কেই বা হারাবে? তার উপরে পেলের সময় ছিল অফসাইড রুল। তাই প্রয়োজন ছিল না লাইনসম্যানের। রেফারি একাই চালাতেন ম্যাচ। তাই টানা ১১ এবং সব মিলিয়ে ১৪ বার ব্রাজিলিয়ান লিগের সেরা গোলদাতা হতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি তাঁর। আর এখন রেফারির সাথে দু’জন লাইনসম্যান, দুই পোস্টের পিছনে দুই অফিসিয়াল, ভিডিও প্রযুক্তির যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে নামতে হয় খেলোয়াড়েদের।
যেখানে মেসির বার্সেলোনা প্রতি মৌসুমের শুরুতেই পড়ে সমর্থকদের প্রবল প্রত্যাশার চাপের নিচে। লিগ, চ্যাম্পিয়ন লিগ, লিগ কাপ সবই জিততে হবে এ কথা মাথায় নিয়েই শুরু করতে হয় প্রতিটি মৌসুম। সেখানে মেসিকে সেরা হওয়ার জন্য প্রতিবছর লড়াই করতে হয় লুইস সুয়ারেজ, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, রবার্ট লেভানডস্কি, আউবামেয়াং, কস্তা, আগুয়েরোদের মতো বিশ্বমানের সব স্ট্রাইকারদের সাথে। সে লড়াইয়েও বাকিদের থেকে এগিয়ে মেসি। ৫ বার বিশ্বসেরার স্বীকৃতি তো ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে আসেনি। তখন পেলের ব্যাপারটা আমার কাছে বাঘছাড়া বনে বিড়ালই সিংহ এরকম মনে হতে লাগল।
তবে সব কিছুতেই মেসিকেই এখন পর্যন্ত এগিয়ে রাখছি। কিন্তু একটা জায়গা দেখা এখনো বাকি। সেটি হল বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স। পেলে ব্রাজিলের হয়ে জিতেছেন ৩টি বিশ্বকাপ, সেখানে তাঁর অবদানও কম নয়। ১২ গোল করে বেশ ভালো অবস্থানে আছেন পেলে। সেখানে মেসির গোল মাত্র ৫টি আর একবার ফাইনাল খেললেও জেতা হয়নি বিশ্বকাপ। আরেকটা চারমিনাল ধরিয়ে বসলাম বিশ্বকাপ নিয়ে। এখানেও জানলাম কিছু অদ্ভূত তথ্য।
রেকর্ডবুক যদিও বলে পেলে ৩টি বিশ্বকাপ জিতেছেন কিন্তু বিভিন্ন উৎস থেকে যা বুঝলাম তাতে বলা উচিত পেলের জেতা বিশ্বকাপ আসলে ২টি। তাঁর ঝোলায় ৩টি বিশ্বকাপ জেতার পদকই আছে তবে ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে পেলে পুরো ম্যাচ খেলেছিলেন মাত্র ১টি। ইনজুরিতে পড়ে তাঁর বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায়। ১৯৬২ বিশ্বকাপ কিন্তু ব্রাজিলই জিতেছিল। সেই বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বল জিতেছিলেন গারিঞ্চা।
তাই পেলে ১৯৬২ এর বিশ্বকাপ জিতেছেন তা নামে থাকলেও আসলে এতে তাঁর কোনো অবদানই ছিল না। ১৯৭০ এর বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলকে বলা হয় সর্বকালের অন্যতম সেরা দল। সেখানে পেলে ছিলেন অন্যান্যদের মতোই। প্রতিভায় তাঁর থেকেও এগিয়ে থাকা খেলোয়াড়ও ছিল সেই দলে। দলীয় প্রচেষ্টায় জেতা সেই বিশ্বকাপেও নিজের আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য জাহির করতে পারেন নি পেলে। কেবলমাত্র ১৯৫৮ বিশ্বকাপেই ঝলক দেখিয়েছিলেন তিনি। করেছিলেন ৬ গোল।
কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হল এত কিছুর পরেও বিশ্বকাপের সেরা রেকর্ডগুলোর কোনোটিতেই পেলের নাম নেই। একবারের জন্যেও গোল্ডেন বুট জিততে পারেননি তিনি। একবারই জিতেছেন গোল্ডেন বল, সেখানেও মেসি বিশ্বকাপ না জিতেও ইতিমধ্যে গোল্ডেন বল অর্থাৎ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা পেয়ে গেছেন।
১৯৫৮ বিশ্বকাপে পেলে করেন ৬ গোল, সেবার ১৩ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ফ্রান্সের জ্যাঁ ফন্তেইন। ১৯৬২’র কথা আগেই দেখেছি। ১৯৭০ এ পেলে গোল করেন ৪ টি, সেবারের সেরা গোলদাতা হন জার্মানির জার্ড মুলার। গোল করেছিলেন ১০টি। ৩ বার বিশ্বকাপ জেতার পরেও বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ জেতার রেকর্ডে নেই পেলের নাম। যে রেকর্ড কাফুর ১৬টি ম্যাচ জিতে। বিশ্বকাপের অলস্টার একাদশে পেলে জায়গা পেয়েছেন একবার, মেসিও জায়গা পেয়েছেন সেখানে। এই রেকর্ড ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের ৩ বার।
যা বুঝলাম তাতে মনে হচ্ছে ৩ বার বিশ্বকাপ জেতানোর ব্যাপারটা পুরোপুরি ‘রপ্পা’।
২০০৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলা মেসিকে কোচ মাঠেই নামিয়েছিলেন মাত্র একবার। সেটিতেই গোল। এরপর অবশ্য ২০১০ বিশ্বকাপে নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলেও কখনো গোলকিপারের দুর্দান্ত সেভ, কখনো বা গোলপোস্ট গোল পেতে দেয়নি তাঁকে। অবশ্য মেসির জন্য এটা অজুহাত হতে পারেনা। ২০১৪ বিশ্বকাপ তো মেসিময়। ৪ গোল করার পাশাপাশি দুর্দান্ত প্লে-মেকিংয়ে প্রায় একাই আর্জেন্টিনাকে নিয়ে যান ফাইনালে। কিন্তু ফাইনালটা আর জিততে পারেননি।
কিন্তু এখানেও কথা থেকে যায়, মেসির বয়স মাত্র ৩১। পরের বিশ্বকাপ ৪ বছর পরই। হয়তো ২০২২ বিশ্বকাপেও খেলবেন মেসি। তাই তাঁর বিশ্বকাপ জেতার সুযোগটা শেষ হয়ে যায়নি একেবারেই। ৫ গোলকে ১৫ গোলে রূপান্তর করাটাও তাঁর পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়, এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করা কিংবা আরেকবার গোল্ডেন বল জেতাটাও খুবই সম্ভব।
আমার মাথায় কেবল একটা কথাই ঘুরতে লাগল ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৭ এই ২১ বছরে পেলের যা অর্জন তার সাথে কিনা তুলনা করা হচ্ছে মাত্রই ১৫ তম বছরে পা রাখা ৩১বছর বয়সী মেসির সাথে! সত্যিই কি অদ্ভূত এই মেসি।
৩ দিনে সর্বোচ্চ ভেরিফাইড আর্টিকেল, সোর্স থেকে সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই করে, সব বিশ্লেষণ শেষ করে, অনেক যুক্তির খন্ডন শেষে অবশেষে মেসো আর তোপসেকে ড্রয়িংরুমে ডাকলাম।
মেসো মিটিমিটি হাসতে লাগলেন। আর টেনশনে তোপসের কপাল দিয়ে যেন ঘাম ঝড়ছে। বড়ই আবেগি ছেলে বেচারা! মেসোই কথা শুরু করলেন,‘‘কি হে ফেলু মিত্তির, কি হল ফলাফল? তপেস বাবু নিশ্চয় মন খারাপ করবে তোর কথা শুনে। হাহাহাহাহা!’’।
‘‘আসলে মেসোমশাই হয় কি, আমরা মানে মানবজাতি হচ্ছি অদ্ভূত রহস্যময়। তুমি আদ্যিকালের মানুষ, তোমার কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত আর মধুসূদনের কাব্যই বেশি ভালো লাগবে। এক্ষেত্রে তোপসে আবার আধুনিক পৃথিবীর। ওর কাছে তো রক মেটালটাই গ্রহণযোগ্য। তুমি পেলের মাঝে তোমার সুর খুঁজে পেয়েছিলে আর তোপসে পেয়েছে মেসির মধ্যে। আমার কাজ ছিল নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার। সেটা করতে গিয়ে বুঝলাম তোমার প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত আর তোপসের প্রিয় রক মেটাল একসাথে যদি কেউ মেলাতে পারে সেটা কেবল এবং কেবলমাত্র লিওনেল মেসি। তাই অন্তত এ ব্যাপারে তোমার অভিজ্ঞতা তোপসের আবেগের কাছে মার খেয়েই গেল’’।
এ ঘটনার পর মেসো সপ্তাহখানেক আমার সাথে কথা বলেননি, আর তোপসের আনন্দ দেখে কে! আমার পারিশ্রমিক হিসেবে এক প্যাকেট চারমিনার আর এলভিস প্রিসলির ব্যবহার করা ব্র্যান্ডের পারফিউমও দিল।
ফেলু মিত্তিরের কাছে আসা সব সমস্যার সমাধান ফেলু মিত্তির নিজেই করে। শেষ কথাটাও বলি আমিই। এখানে অন্যরকম হবে কেন?
সুতরাং প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলু মিত্তির ওরফে ফেলুদা বলছে,
‘‘মেসি, কেস ক্লোজড’’।
Bangla Blog Episode_07
Bangla Blog Episode_06
Read My English Blog
@docktalk
@shahadatsagor
@alaminhosssain
@zaku
@dindar
@jahangirwifii
@shuvomahfuz