
SOURCE
আলহামদুলিল্লাহ! দীর্ঘ দুইবছর এদিক সেদিক ঘুরাঘুরির পর আজকে ফাইনালি জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি) ভুল সংশোধন করলাম। জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধনের রাস্তাটা মোটেও সহজ ছিল না। কারণটা আমাদের সবারই জানা। এদেশে সঠিক নিয়মে কোন কিছুই হয় না। সরকারি কাজকর্মে সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হতে হয় নাগরিকদের। এখানে মানুষের মুখের কথার কোন দাম নেই, দাম আছে শুধু টাকার। আপনার টাকা আছে, তাহলে কাজও দ্রুত হয়ে যাবে! আর টাকার জোড় নেই? তাহলে পথে পথে অবহেলিত হয়ে ঘুরা ছাড়া উপাই দেখছিনা!!
আজকে লেখতে বসার মূল কারণ, জাতীয় পত্র সংশোধনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা। যাতে করে এই আর্টিকেলটি পড়ে অন্যরাও তাদের পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধন করতে পারে। সাধারণত এই ভুল সংশোধন করার বেলায় আমরা বুঝে উঠতে পারিনা আমাদের কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কোথায় যাওয়া উচিত বা কার কাছে যাওয়া উচিত। ফলে একটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যেতে হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কারো বা নিজের নামে ভুল, কারো বাবা- মায়ের নামে ভুল অথবা জন্মসালে ভুল। ভুল যেমনই হোক না কেন তা সংশোধন করা অবশ্যক। নাহয় পরবর্তী কোন স্টেজে গিয়ে আপনাকে আটকে যেতে হবে। আমার বেলায় ভুল হয়েছিল জন্মসালে। সবগুলো সার্টিফিকেটে যেখানে জন্ম সাল ২০০০, সেখানে এনআইডি কার্ডে তা ২০০১।
মূলত এনআইডি কার্ড হয়েছিলো আমার জন্ম সনদ অনুযায়ী।ভুলক্রমে সার্টিফিকেট আর জন্ম নিবন্ধনে বয়সের মধ্যে পার্থক্য ছিলো এক বছরের৷ ফলে এক বছরের বয়সের পার্থক্য হয়ে যায় সার্টিফিকেট এবং জাতীয় পরিচয় পত্রে। সেই সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে আমি সিদ্ধান্ত নেই এনআইডি কার্ডের জন্ম সাল সংশোধনের। সেটা ২০২০ সালের শেষের দিকের কথা; সার্টিফিকেট রেফারেন্স দিয়ে জন্মসাল পরিবর্তনের আবেদন করি বাংলাদেশ এনআইডি ওয়েবসাইটে।
তার মধ্যেই ২০২১ পেরিয়ে ২০২২ সাল চলে আসে, কিন্তু আমার অ্যাপ্লিকেশনটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে জানালাম জাতীয় পরিচয় পত্র সংস্করনের কাজ নাকি আপাতত বন্ধ রয়েছে৷ তাই কি আর করার! এর মাঝেই সিদ্ধান্ত নেই জন্ম সনদ সংশোধনের। ইউনিয়ন পরিষদে বেশ কয়েকদিন যাওয়া আসা করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাবমিট করে নতুন অনলাইন জন্ম নিবন্ধনটি হাতে পাই।
এইতো কিছুদিন আগে বন্ধুরা মিলে আলাপ করছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে কার লক্ষ্য কি? কেননা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হতে আর মাত্র কয়েকটা মাস বাকি। সবার মাঝে আমি দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ইচ্ছা পোষন করি। তখনই খেয়াল হয়, আমার যে এনআইডি কার্ড ঠিক নেই। তাহলে আমি পাসপোর্ট করবো কিভাবে !!
ঠিক তখনই আবারো খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম আমার অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো পেন্ডিং রয়েছে। তাহলে এখন কি করা যায়? এমন প্রশ্নে এক বন্ধু বললো উপজেলা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে যোগাযোগ করতে। যেই পরিকল্পনা সেই কাজ, সুযোগ পেয়েই চলে আসলাম বাড়িতে। সব কাগজপত্র নিয়ে সকাল সকাল হাজির হয়ে যাই দাউদকান্দি নির্বাচন কমিশনে।
সবচাইতে অবাক করা বিষয় ছিলো, যেই কাজটির জন্য আমি দীর্ঘ দুই বছর ধরে এদিক-সেদিক ঘুরতেছি, ডকুমেন্টস দেখানোর সাথে সাথেই ১৫ মিনিটের মধ্যে তারা আমার অ্যাপ্লিকেশনটির গ্রহণ করে জন্মসাল সংশোধন করে দিলো। এতো সহজেই কাজটি হয়ে যাবে আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি।কাজটির জন্য আমাকে একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি। ভাবা যায় এই কাজ টাকা ছাড়া হয়ে গেছে!! আমিতো রীতিমতো টাকা নিয়েই প্রস্তুত ছিলাম।
আলহামদুলিল্লাহ! কোন রকমের হয়রানি ছাড়াই শেষটা সুন্দর হয়েছে।
সর্বশেষে আমার পরামর্শ থাকবে, আপনাদের এনআইডি কার্ডে কোন ধরনের সমস্যা থাকলে প্রথমে আপনারা অনলাইনে একটি অ্যাপ্লিকেশন করবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস হিসেবে জন্ম সনদ এবং সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি অ্যাপ্লিকেশন এর সাথে যুক্ত করে দিবেন। ৩৫০ টাকা খরচ লাগবে এই অ্যাপ্লিকেশনটি করার জন্য। আপনারা আপনাদের নিকটস্থ কোন অভিজ্ঞ কম্পিউটারের দোকানে যোগাযোগ করে অ্যাপ্লিকেশনটি সম্পন্ন করতে পারেন।
অ্যাপ্লিকেশনটি সম্পন্ন হওয়ার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ভুল সংশোধনের কোন মেসেজ না আসলে আপনারা আপনাদের উপজেলা / থানা পর্যায়ে নির্বাচন অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করবেন। আশা করি জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন হয়ে যাবে।
ধন্যবাদ!