পড়াশোনা ! আমার সবচাইতে অপছন্দের একটি কাজ বলা চলে। ছোটবেলা থেকেই আমি খুবই ফাকিবাজ মানুষ। পড়তে বসলেই আমার শুধু ঘুম আসতো , আর যেমনি বই-খাতা বন্ধ করে শুতে যেতাম, ওমা! ঘুমের কোন অস্তিত্বই নেই।
যাইহোক, না চাওয়া সত্ত্বেও জীবনের তাগিদে কোনরকমে এসএসসি আর এইসএসসি পাশ করে ভর্তি হই বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন পরিবেশ আর নতুন মানুষদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে নিতেই একটা বছর কেটে যায় নিজের অজান্তেই। যেইনা নিজেকে একটু মানিয়ে নিয়েছিলাম, ঠিক সেই সময়েই করোনা এসে হাজির।
দিন দিন করোনা সংক্রমণ বাড়ার ফলে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে যায় বন্ধ। বন্ধ শব্দটা আমার খুব পছন্দের। সবকিছু বাদ দিয়ে দিনটাকে নিজের মতো করে উপভোগ করা যায়৷ তাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ শুনে খুব খুশিও হয়েছিলাম৷ শুয়ে বসে দিনগুলো কাটছিলো ভালোই। সারাদিন ঘুড়ি উড়িয়ে বেড়াতাম, করোনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিকেলে ক্রিকেট খেলা আর আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়তাম।
কিন্তু আমার এই খুশি বেশিদিন টিকতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট। তারা হাজির অনলাইন ক্লাস আর ডিআউ বিলসি নামক নতুন প্লাটফর্ম নিয়ে। নিমিষেই সব আনন্দ হারিয়ে গেলো নদীর জলে। একের পরে এক ক্লাস, এসাইনমেন্ট আর কুইজে পারফম করতে করতে আমার অবস্থা বেগতিক। ওয়েভার টিকিয়ে রাখতে রিতিমতো যুদ্ধ শুরু।
তবে কিছুদিনের মধ্যেই সব সিরিয়াসনেস শেষ! ক্লাসে জয়েন দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম নিজেও বলতে পারতাম না৷ ওমা চোখ খুলে দেখতাম গুগল মিটে আমি ছাড়া আর কেউ নাই। মাঝে মাঝে তো স্যার মোবাইলে কল দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতো, আর নাহয় বন্ধুরা কল দিয়ে জানাতো স্যার আমাকে খুজছে । তারপর কতো বকাঝকা তা আর নাইবা বললাম। খাওয়া আর ক্লাস করা আমার রিতিমতো একটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছিলো 😄।
ঠিকমতো ক্লাস না করার ফল পাওয়া যেতো পরীক্ষার সময়। প্রশ্নপত্র দেখে মাথায় বাজ পরতো! সারা অনলাইন দুনিয়া খুজেও এই প্রশ্নের উত্তর আর খুজে পাওয়া যেতো না। আর যদি কোন রকমে পাওয়া যেতো তাহলে তো কথাই নেই। সবাই এক ই উত্তর। দিনশেষে স্যার আমাদের দিতো পাচে এক 😂।
এই অনলাইন পরীক্ষার সময় ক্লাসের ভালো ছাত্রদের তো খুজেই পাওয়া যেতো না। ম্যাসেজ দেখার ও সময় নেই তাদের। পরীক্ষার পর রিপ্লাই দিয়ে বলতো, আমি কিছু পারি নাই রে। দিনশেষে তারাই টপ 😂।
একবার এক পরীক্ষায় এক ঘন্টা ধরে ডিজাইন আকাঁর পর সেই ফাইল সেইভ না করেই ভুলবশত ক্লিয়ার করে দেই আমি। উত্তরপত্র সাবমিট করার সময় গিয়ে দেখি আমার সেই ফাইল আর নেই। এখন কি করা যায়! আছে মাত্র আর ত্রিশ মিনিট৷ তৎক্ষনাৎ বন্ধু সৌরভের কাছে হাজির হই সাহায্যের আবেদন নিয়ে৷ বন্ধু আমার নিতান্তই ভালো মানুষ৷ তারা সাহায্যে দুইটা ডিজাইন একে কোনরমকে জমা দিয়েছিলাম সেদিন 🙂।
করোনাকালে সবচাইতে ভালো দিক ছিলো ক্লাসগুলো রেকর্ড করা হতো। ফলে ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে অথবা কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে পুরনার তা দেখে নেওয়া যেতো। আমার মতো ফাকিবাজ ছেলের জন্য যা ছিলো আশীর্বাদস্বরূপ৷ সারা সেমিষ্টার ফাকিবাজি করলেও পরিক্ষার আগে ঠিকই ক্লাসগুলো দেখ হয়ে যেতো৷ টুকটাক পড়াশোনার পাশাপাশি করোনাকালে সময়গুলোকে খুবই উপভোগ করেছিলাম, যা হয়তো জীবনে দ্বিতীয়বার আর কখনো পাওয়া হবে না।

IMG