
প্রায় এক মাস হয়ে গেছে জীবনের তাগিদে পরিবার ছেড়ে ঢাকায় আছি। করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় এক বছর আট মাস বাড়িতে থাকার পর ঢাকায় আসা হয়েছিলো এক মাস আগে। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ঢাকায় আসা আমার। অনেকদিন পরিবারের সাথে থাকার পর এই একমাস দূরে থাকা যেন আমার কাছে কয়েক বছরের মত মনে হচ্ছিলো। তাই গত চার-পাঁচ ধরেই চিন্তা করছিলাম পরিবারের কাছে ফেরার কথা। কিন্তু একের পর এক সমস্যা আর কাজের জন্য সময় সুযোগ নির্ধারণ করতে পারছিলাম না। যথারীতি আজ সকাল আটটায় আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আজ বিকাল 2 টায় আমার একটি প্রেকটিকেল ক্লাস থাকায় আমি ল্যাব রিপোর্ট তৈরি করতে বসে পরলাম।
রিপোর্ট লেখার সময় আমার বন্ধু বললো ও একটা কাজে বাড়িতে যাবে। ওর বাড়িতে জাওয়ার কথা শুনে আমারও আর মন বসতেছিলো না। অনেকক্ষন চিন্তাভাবনা করে আমি আমার মনের কথা টাই শুনলাম। তারপর, বাসায় আসার জন্য ব্যাগ গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমি। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বেলা ১০ টার দিকে বেড়িয়ে পরি আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে।
এইবার আমার ছোট ভাই মাধ্যমিক পরিক্ষা দিবে। তাই আগে থেকেই ইচ্ছে ছিলো ভাইকে কিছু গিফট করবো। তাই আম্মুর পরামর্শ মোতাবের আমি মিরপুর-১ নেমে পরি ছোট ভাইয়ের জন্য জামাকাপড় কিনার উদ্দেশ্যে । আমার সাথে আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে এসেছি জামাকাপড় পছন্দ করার উদ্দেশ্যে। আমার তেমন অভিজ্ঞতা নেই এই ব্যাপারে। পরে বন্ধু আর আমি মিলে পছন্দ করে কয়েকটা জামাকাপড় কিনে নেই ছোট ভাইকে দিবো বলে।
এইদিকে আবার ছোট বোন আবদার করেছে স্কুল ব্যাগ কিনে দিতে। একমাত্র বোন আমার, বরই আদোরের। ভাইয়ের জন্য কেনাকাটা শেষ করেই শুরু করি বোনের জন্য ব্যাগ কেনার কাজ। কয়েকটা দোকান দেখে পছন্দ করে কিনে ফেলি বোনের জন্য ব্যাগ। আজকে নিজেকে অনেক দায়িত্বশীল মনে হচ্ছিলো। ভাই-বোনদের জন্য কিছু কিনতে পারা, তাও আবার নিজের আয় করা টাকা দিয়ে , সত্যিই খুব আনন্দের বিষয় যা আমি আজকে অনুভব করতে পারভছিলাম।



তারপর বন্ধুকে বিদায় দিয়ে আমি মিরপুর থেকে বাসে উঠে পরি। প্রায় ২ ঘন্টা পর আমি গুলিস্তান এসে নেমে পরি কুমিল্লার বাসের উদ্দেশ্যে। গুলিস্তান থেকে বি.আর.টি.সি বাসে উঠে পরি কুমিল্লার দাউদকান্দির উদ্দেশ্যে । বাসে বসে ভাবতেছিলাম রাস্তা ফুরায় না কেনো। নতুনা জামা পেয়ে ভাই-বোন কতই না খুশি হবে। প্রায় তিনঘণ্টা পর আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে জাই। ছোটবোনে নতুন ব্যাগ পেয়ে তো মহাখুশি। ব্যাগ কাধে নিয়েই ঘুরছে সারা বাড়ি। ভাই-বোনের অনন্দে দেখে নিজের ছোটবেলার কথা মনে পরে পরে যায় আমারও আজ। বাবা যখন নতুন জামা নিয়ে আসতো তখন কতোই না ভালো লাগতো।
বিকেলে দেকে আমার বন্ধু আবদার করে তাকে আজ খাওয়াতে হবে। সব সময় বন্ধু ই আমাকে খাওয়ায়। তাই নিজের হাতে আজ কিছু টাকা থাকায় আর না করতে পারলাম না। সন্ধ্যার দিকে বেরিয়ে পরি রেস্তুরেন্টের উদ্দেশ্যে । আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়া শেষে ফিরে আসি বাসার উদ্দেশ্যে।

পরিবারের সাথে থাকতে পারাটা ভাগ্যের ব্যাপার। দূরের সময়টা এক মাসের হলেও তা কখনও কখনও কয়েক বছরের সমান। পরিবারের মানুষগুলোর থেকে আপন আর কেউ নেই। তাদের মাঝে ফিরতে পারাটা অত্যন্ত আনন্দের।