সুনামগঞ্জ ঘুরে এসে ভয়াবহ অবস্থা সেদিন।
একদম লাউড়ের-গড় থেকে, শুকিয়ে যাওয়া জাদুকাটার মরুভুমি পাড়িয়ে দিয়ে শিমুল বাগান বারিক্কে টীলা ছাড়িয়ে চলে গিয়েছিলাম মেঘালয়ের দেয়ালের কোল ঘেঁষা নীলাদ্রি লেকে।
একেবারে আপাদমস্তক চষে ফেলা যাকে বলে।



শীতের রুক্ষতা ঠাহর করা যায়।

রাস্তার ধকলে আমাকে খুব কমই কাবু করতে পারে কিন্তু সেদিন এমন অবস্থা যে বিপ্লব বললো ডর্মে ঢোকার আগে কিছু খেয়েদেয়ে অন্তত ঢোকো যেহেতু সকাল থেকে এই সন্ধ্যা অব্দি একবারও পেটভরা কোনো খাবার খাওয়া হয়নি!
কিন্তু আমি ক্লান্তিতে আর কোথাও থামিতে চাইলাম না। টেনে চলে এলাম ডর্মে। সিএনজিতে থেকেই লাদেনকে ফোন দিলাম গরম পানি বসিয়ে দেয়ার জন্য বলতে। যাতে আমি যেতে যেতেই গোসলের পানি গরম হয়ে যায়! ফোনের কি যে সমস্যা হলো লাদেন, ফাহিম কারো সাথেই কথা বলতে পারলাম না!
ডর্মে ঢুকতেই দেখি লাদেন। বললাম সুমনকে যদি একটু পানির কথা বলতো উপকার হতো।
লাদেনও বললো আমি আপনার ফোন পেয়ে ভেবেছিলাম হয়তো তাই হবে!
পানি বসিয়ে দিয়ে এসে বললো "এক কাপ চা খাবেন পানি গরম হতে হতে!?"
শ্রান্ত চোখে আমি লাদেনের দিকে চেয়ে হাসলাম। আমার ওই হাসিই বলে দিল এই মুহুর্তে এটিই ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর বাক্য!
এই বদান্যতার কথা চিরকাল মনে থাকবে! মাত্র দুদিনও হয়নি, ও বোধহয় আমি যে কি পরিমাণ চা খোর এটা টের পেয়ে গিয়েছিল এরই মাঝে! এত আহ্লাদ আমি কোথায় রাখব!
আর অবশ্যই ওরা কখনো বিস্কিট ছাড়া আমাকে চা দেয়নি! খেয়েদেয়ে গোসল দিয়েই খাবার অর্ডার করবো ভাবছি সেসময় ফাহিম মেসেজ দেয়- "আপনি কিন্তু আজ আমাদের সাথে খাবেন। খাবার অর্ডার করবেন না!"
ওহহো ভুলে গিয়েছিল বলতে। আগের রাতে বেগুন ভাজার একথা সেকথা গল্প ফাহিম বলে সে আমাকে ওর হাতে মুরগী রান্না করে খাওয়াবে। সুমনও বলল ফাহিমের মুরগী রান্না নাকি অনবদ্য!
আমি হেসে ফেললাম! উত্তর পাঠালাম ঠিকাছে আর সাহায্য লাগলে যেন আমায় ডাকে।
যেহেতু সাহায্য করতে চাইলাম, ফাহিম দায়িত্ব দিলো মাংস কাটার!
রান্নাবান্নায় আনাড়ি হওয়া সত্ত্বেেও, সেখানে বেশ গুরুগাম্ভীর্যের সাথে সুমনকে একটা আস্ত মুরগী কাটা শিখিয়ে ফেললাম!

হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়া ফাহিমের মুরগীর মাংস রান্নার শিল্প দেখে অভিভূত!
আর আমি জোর করে বেশী করে আলু দেয়ালাম নিজ স্বার্থে।
আমার জন্য ঝাল এতই কম দিল তবুও বেশ ঝাল হয়ে গেলো! কিন্তু স্বাদ যা হলো তা অতুলনীয়! এখনো যেনো মুখে লেগে আছে! খেয়ে দেয়ে রুমে যেতেই দেখি সুমন চা নিয়ে এলো! ভেবেছিলাম পেট টান করে খেয়ে একটা ঘুম দিব।
কিন্তু চা পেয়ে উঠে বসে গোল্ডেন বাউ বইটা্র পাতা উল্টালাম