তিতাস নদীর পাড়ে তোলা আমার আর মহি'র এই ছবিটা, আমার ভারী পছন্দের
আমার ঘুরার জন্য একটা ভীন্ন শহর, ভীন্ন মানুষ, ভীন্ন রাস্তাঘাট হলেই হয়! আহামরি কোনো দর্শনীয় স্থান বা চিত্রকর্ম থাকতেই হবে এমন জরুরী না। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ঘোরার সুযোগ আসতেই লুফে নিলাম তাই!
আর কিছু না হলেও অন্তত অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাসে বর্ণিত সে তিতাস নদীর দেখাতো মিলবে!
আমি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ভ্রমণে যখন গিয়েছিলাম, তখন সে শহর সদ্য (কু)খ্যাতি কুড়ানো শুরু করেছে। সেই ক’বছর আগে ঘটে যাওয়া বিশাল দাঙ্গাহাঙ্গামার ঠিক পরপরই।
এ শহরের নামে যখন এত আতংক ছড়ানো চারিদিকে, আমি তখন সে শহরে ঢুকলাম আমার গতানুগতিক মুসাফিরিয় কৌতুহল নিয়ে।
যখন পৌঁছেছি, তখন বিকেল প্রায় পড়ে গেছে।
বিকেল থেকে সন্ধ্যে অব্দি শহরের এমাথা ওমাথা ঘুরলাম।
গোছানো, নিরবিলি একটা শহর। রাস্তাঘাটে ঘুরলাম।
সন্ধ্যার রেলস্টেশন (ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া), তেতুলের ঝাল চা, সরকারি কলেজের পাশে লোভনীয় ফুচকা আর ছোট্ট গলির মত রাস্তায় বিশালকায় শহরের ছাদের মত করে দাঁড়িয়ে থাকা ফ্লাইওভারটির এমাথা থে ওমাথা ঘুরে কেটে গেলো সে সন্ধ্যেটি।
ফ্লাইওভারের উপরে দাঁড়িয়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াকে আমার মনে হয়েছে ঢাকার মগবাজারের একটা অংশ যেন! !
রেলস্টেশনে যখন গেলাম চা খেতে, জানলাম রকমারি স্বাদের চা পাওয়া যায়। শহরের ভেতরে টঙ তেমন দেখলাম না। ভাবলাম, তাই হয়তো মোটামুটি সবাই রেলস্টেশনেই ভীড় জমায় চা খেতে। এই রেলস্টেশনের মত চা-এর আয়োজন অন্য কোনো স্টেশনে কখনো দেখিনি।
যেন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার জাতীয় চা-খানাগার এটি!
খুব ভোরে উঠে গেলাম তিতাসকে দেখতে। তিতাসের বুকে তখন কেবল সূর্যদয় হচ্ছে।
শীতকাল।
হাড় জিরজিরে তিতাস নদী শুকিয়ে আছে, ঠিক যেন একটি সাধারণ খাল!
মেরুড়া শশ্মান ঘাট থেকে নৌকায় করে নদী পেরিয়ে ওপারে গেলাম। বিশাল সুবিস্তীর্ণ একটা জায়গা, ঘাসে ছাওয়া। মাঝখানে একটা বটগাছের মত গাছ।
গাছের গোড়ায় আবার চমৎকার বাঁধানো আসন পাতা! ওখানে কতক্ষণ বসে, নদীর তীরে ভোরের আবেশে চারপাশটা উপভোগ করলাম।
একটা কর্মচঞ্চলহীন, আকাশ ছুঁতে চাওয়া ইটের ভাটার চুল্লী যেন মহাকালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুবিস্তীর্ণ জনমানবহীন সে প্রান্তরে।
চারপাশটা তাকালে মনে হবে একটা ছন্নছাড়া একটা দ্বীপে চলে এসেছি হঠাৎ করে।
!
জায়গাটা দেখে আমি আর বিশাল, হ্যারি ড্রেসডেনকে এখানে সামন করে কিভাবে একটা চমৎকার ফাইটের প্লট করা যায়, সেটা জল্পনা কল্পনা করে ফেললাম। যেকোনো ফ্যান্টাসি গল্পের ফাইট সিনের জন্য মারাত্মক যুতসই একটা জায়গা!
মহিও যোগ দিয়েছিল আমাদের সাথে।
তারপর আমাদের গল্প তিতাস নদীর ইতিহাস ধরে, জেলে পাড়ার জীবনযাত্রা ঘুরে, দেশীয় রাজনিতির উত্থান পতনকে ছুঁয়ে সেখান থেকে ইন্যারন্যাশনাল রিলেশন ছাড়িয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি হয়ে এসে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে শেষ হয়! এসব আলাপে একমাত্র তৃপ্তি পাই মহি আর ফাহিমের সাথে আলাপ করে।
বিরিয়ানির সাথে বোরহানির চুমুক যেরকম তৃপ্তি দেয়, ওদের সাথে এসব রাজ/সমাজ।অর্থ সবধরনের নীতির অনীতি নিয়ে আলাপ করে বেস আরাম পাই।
যাকজ্ঞে, নদীর এপারে দাঁড়িয়ে মহি বললো, দেখেন! সামান্য একটু নৌকা দূরত্বে নদীর এপার আর ওপারের মাঝে কি আকাশ পাতাল পার্থক্য!
সত্যিই তাই!
তিতাসের এপার থেকে ওপাশের মাঝে বিস্তর ফারাক!
এ পাশটায় মাঝে হঠাৎ হঠাৎ দু'একটা বাড়িঘর দেখা যায়, একচালা টিনের বা মাটির ঘর। কদাচিৎ দু একজন মানুষের দেখ মেলে কি মেলেনা। কিছু আবাদী জমি, বাড়ির আশেপাশে বিস্তর শাক-সবজির সমাহার।
অপরদিকে অন্যপাশে বিশাল বিশাল দালান আর ভীড়বাট্টা। এক মহা ব্যস্ত জনজীবন।
শহরটিকে ভালো লেগেছে।
বিশেষ করে নদীর ওপারের জায়গাটি।
ওরকম জাগায় বসে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দেয়া যায়।
পরেরবার গেলে জেলে পাড়ায় যাব, এবার সময়াভাবে যাওয়া হলোনা!