আমার বাবা এলাকার একজন সম্মানিত ব্যক্তি। এলাকার প্রতিটি মানুষ বাবাকে এক নামে চিনে। আমার বাবা একজন ফরহেজগার ও নামাজি ব্যাক্তি। বাবা মোটামোটি সারাদিন মসজিদে থাকে। আমি সারাদিন বাসায় থাকি। যদিও কোনো কাজে বাইরে যেতে হয় তাহলে পর্দা করে ঘর থেকে বের হয়। এভাবেই একদিন আমি পর্দার সাথে বাইরে বের হলে এলাকার কিছু বখাটে ছেলে আমাকে ডিস্ট্রাব করতে থাকে। ছেলেটি নাকি আমাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু সে আমাকে কখনো দেখিনি । শুধু আমার দুই চোখ দেখে নাকি সে আমার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমার দুই চোখ দেখলেই নাকি সে অনুমান করতে পারে আমি কতটা সুন্দর।
আমি যত বার বাসা থেকে বের হয় এলাকার এই বখাটে ছেলেটি আমার পিছু পিছু আসে ও আমাকে এসব কথা বলতে থাকে। আমি খুব বিরক্ত হয়ে ছেলেটিকে অনেক সময় অনেক ধরণের কথা বলি আমার পিছু ছেড়ে দিতে বলি। কিন্তু সে আমার পিছন ছাড়ে না। এই বখাটে ছেলেটির ভয়ে আমি কিছুদিন বাসা থেকে বের হয়নি। বেশ কিছুদিন পর বাসা থেকে বের হয়ে কিছু দূর যাওয়ার পরেই সে আমাকে দেখে ফেলে। আমিও খুব জোরে হেটে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও একাকী থাকার কারণে সে আমার হাত ধরে একটু আড়ালে নিয়ে যাই। আমিও মানসম্মানের ভয়ে চিৎকার দিতে পারিনি।
সে আড়ালে টেনে নিয়ে আমাকে জানাই সে আমাকে বিয়ে করতে চাই। এবং এর জন্য সে সবকিছু করতে রাজি। আমি ভয়ে কান্না করছিলাম ও মনে মনে আল্লাহকে ডাকছিলাম আল্লাহ যেন আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। আমি আমার নিজেকে কিছুটা সামলে দিয়ে কান্না কান্না অবস্থায় বলতে লাগলাম আপনি তো আমার জন্য সব কিছু করতে রাজি। আপনি আমার জন্য বেশি কিছু করতে হবে না। আপনি যদি আমার একটি মাত্র স্বর্থে রাজি হন তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হবো। সে আমার কথা শুনে খুব আগ্রহ নিয়ে জানালো সে আমাকে পাওয়ার জন্য যে কোনো স্বর্থে রাজি। তখন আমি বললাম আপনি আগামী ৪০ দিন আমার বাবার সাথে এই মসজিদে নামাজ পড়বেন। এবং সকল ধরণের বাজে আড্ডা ছেড়ে দিতে হবে। কোনো ধরণের কোনো নেশা করা যাবেনা। এলাকার সকল মুরুব্বিদের সাথে সম্মানের সহিত কথা বলতে হবে। তাহলেই আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হবো।
বখাটে ছেলেটি তখন ভাবতে লাগলো এ আর এমন কি কঠিন কাজ। ৪০ দিন নামাজ পরে যদি আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে পাই তাহলে আমি তাই করবো। এগুলো করা আমার জন্য কোনো বেপার এই না। সে আমাকে জানালো সে এই সকল স্বর্থে রাজি ও আমাকে স্বসম্মানে সেখান থেকে বিদায় দিলো।
আমি বাড়িতে এসে আমি আমার বাবাকে সব কিছু খুলে বলি। আমার বাবা আমার কথা গুলো শুনে একটু অবাক হলো। তবে বাবা হাসি মুখে বেপারটাকে মেনে নিলো। বাবা নামাজের সময় হলে মসজিদে যাই ও দেখে সেই ছেলেটি নামাজ পড়তে এসেছে। নামাজ শেষ হলে বাবা ছেলেটিকে ডাক দিয়ে কাছে বসিয়ে বলতে লাগলো এসব হাতে থাকা ব্রেসলেট খুলতে ও মাথায় টুপি পড়তে। ভদ্র পোশাক পড়তে। সেও পরবর্তী নামাজের সময় ভদ্র ভাবে টুপি পরে নামাজে আসে। এখন সে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসে। কয়েকদিন পর আমার বাবা নামাজের পর তাকে ডাক দিয়ে বসিয়ে হাদিস সম্পর্কে কথা বলতে থাকে। ও হাদিসের বই পড়তে দেয়। কি করলে পাপ হয়। কি করলে ভালো হয়। খারাপ কাজ মন্দ কাজ এসব কিছু আস্তে আস্তে বাবা তাকে শিখাতে থাকে। ও কবরের ভয়ংকর আজাব সম্পর্কে বলে।
এভাবেই আরো বেশ কিছুদিন চলে গেলো। সে এখন অন্য রকম হয়ে গেলো। এখন আর এলাকার বখাটে ছেলে সে না। তার বন্ধুরা তাকে ডাকলে সে আর এখন তাদের ডাকে সারা দেয় না। সে এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিক ভাবে মসজিদে এসে আদায় করে। প্রথম দিকে তার বন্ধুরা এটা ভাবতো যে এগুলা শুধু একটা মেয়েকে পাওয়ার জন্য কিছুদিনের জন্য অভিনয় করছে। কিন্তু একমাস যাওয়ার পর সবাই বুঝতে পারলো সে সত্যি ধার্মিক হয়ে গেছে। এখন রাস্তায় চলার পথে ছোট বড় সকলকে সালাম দেয়। ও এলাকার সকলের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলে। আমার বাবা এই কয়দিনে তাকে পরিবর্তন দেখে অনেক খুশি হয়।
৪০ দিন যখন পূর্ণ হলো সেদিন আমার বাবা তাকে জানান তার পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসতে। বিয়ের বেপারে কথা বলতে। কিন্তু সে আমার বাবাকে জানাই আজকে সে আমার সাথে একটু দেখা করতে চাই। তখন বাবা তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে। আমি তাকে দেখে অনেক ভয় পেয়ে যাই ও আড়ালে চলে যাই। তখন সে আমাকে দূর থেকে বলতে লাগলো। আমি তোমার কাছে সেদিনের ঘটনার জন্য ক্ষমা চাই। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। সাথে এটাও বলে তুমি চাইলে আমাকে দেয়া ওয়াদা উঠিয়ে নিতে পার। আর আমিও চাইনা তুমি তোমার কথা রাখার জন্য তোমার অনিচ্ছা থাকা সত্বেও আমাকে বিয়ে করো। এসব বলে সে চলে যাই।
তারপর বাবা আমাকে বলে তুই রাজি থাকলে আমি ছেলের পরিবারের সাথে কথা বলবো। আর ছেলেটা এখন অনেক ভালো হয়ে গেছে ও ধার্মিক হয়ে গেছে . বাবার কথা শুনে আমি বিয়েতে রাজি হয়। তার কিছুদিনের মধ্যে দুই পরিবার এক হয়ে আমাদের বিয়ে হয়।