আচ্ছা।'
'আচ্ছা মানে?'
আসাদ একদলা থুথু ফেলে বলল,'আচ্ছা মানে আচ্ছা।'
সে পেছন ফিরে হাঁটা দিল।রফিকুল তার পিছু পিছু আসতে লাগল।আসাদ আচমকা রফিকুলের দিকে তাকিয়ে বলল, 'আপনার স্যার কেমন লোক ছিলেন?'
'তার মতো ভালো লোক আমি আর এই জীবনে দেখি নাই।'
'তাহলে আপনার স্যারকে যদি বলা হতো,এই দেশে একটা ধর্ষনের বিচার পাওয়ার বিনিময়ে,একজন জঘন্য অপরাধীর অপরাধের শাস্তি পাওয়ার বিনিময়ে একজন নিরপরাধ মানুষকে প্রকাশ্যে জীবন্ত অগ্নিদন্ধ হয়ে মরতে হবে,তাহলে আপনার স্যার খুশি হতেন?'
রফিকুল চোখ তুলে তাকাল।আসাদ বলল,'সব শর্ত পুরন করার পরও,যোগ্য হওয়ার পরও কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে কেউ একজন সেই স্কুলটা বন্ধ করে রাখবে দিনের পর দিন।আর সেই স্কুলের এমপিওভুক্তির জন্য সেই স্কুলেরই একজন শিক্ষককে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়ে মরতে হবে,এটা শুনলে আপনার স্যার খুশি হতেন?
রফিকুল জবাব দিল না।আসাদ বলল,'তিনি আগুনে পুড়ে আত্বহত্যা করার পর তার মৃতু্্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের কাজে ব্যবহার করার জন্য কেউ তাকে এত বড় একটা পুরষ্কার দিবেন,এটা শুনলে তিনি খুশি হতেন?
রফিকুল এবারও জবাব দিল না।আসাদ বলল,'ওই পুরষ্কারের গায়ে এটা লেখা থাকবে না যে"আজিজুর রহমান,মরণোত্তর"?'
'জি,তা তা থাকবেই।মৃতু্্যর পরে পেলে তো মরণোত্তরই লেখা থাকবে।সেটাই তো স্বাভাবিক।'
'ওটা কেটে একটা শব্দ লিখে দিতে বলতে পারবেন?'
'কী শব্দ?'.
'মরণোওম।'
'মরণোওম?"
'হুম।'
কেন?মরণোওম মানে কী?'
'মরণোওমের কোনো মানে নেই।কিংবা আছে।'
'কী মানে?'
'যেখানে জীবনের চেয়ে মৃত্যু উওম।মরণই উওম।জীবিত মানুষটির চেয়ে মৃত মানুষটি যেখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে,সেখানে মরণেই তো উওম।কি,উওম না?'
রফিকুল জবাব দিলনা।তবে আসাদ আবারও থুথু ফেলল।একদলা থকথকে থুথু।থুথটুকু পড়েছে ঘাসের ওপর।থকথকে গা-ঘিনঘিন একদলা থুথু।ততক্ষনে বৃষ্টি পড়তে শুরু করছে।তারা দুজনেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই গা-ঘিনঘিন থুথুটুকুর দিকে।এই বুঝি বৃষ্টিতে ওই গা-ঘিনঘিনে থকথকে থুথুটুকু ধুয়ে যায়!