শুভ জন্মদিন বন্ধু (রিয়াদ)
আমার কলেজ জীবনের সবচেয়ে বিশস্ত, নীতিবান, ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আজকে জন্মদিন।আমার বন্ধু আর আমার কিছু গল্প আজ আপনাদের আপনাদের সাথে শেয়ার করবো,আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
রিয়াদ এর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় কলেজে,আমরা দুজনেই কলেজে একেই ডিপার্ট্মেন্টের ছাএ ছিলাম,রিয়াদ খেলা পাগল ছিলো।
আর আমিও,তাই আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর ছিলো,আমি অতো ভালো খেলতে না পারলেও রিয়াদ যেই টিমে খেলতো সেই টিমে তার ভালো খেলোয়াড় হওয়ার কল্যানে আমার সুযোগ হয়ে যেতো, তার বিপক্ষে কখনো খেলার সাহস হয়নি,ওর বলের গতি ছিলো দেখার মতো, এভাবেই আমাদের খেলাধুলা আর কলেজ জীবনের কিছু ক্লাশ নিয়ে শেষ হয়েছিলো প্রথম ৬মাস।
৬মাস পর আমরা দুজনে একেই বাসায় উঠি,যার ফলে আমাদের দুজনের বন্ধুত্বটা আরও ভালো হয়ে উঠে,একসাথে পড়াশোনা,কলেজ যাওয়া মজা করা সবগুলোই তখন আমাদের একসাথে হতো,ওর জীবন ছিলো খেলাধুলা আর তাড়াতাড়ি ঘুমানো,তার খেলাধুলা আর তাড়াতাড়ি ঘুমের কারনে অনেক ঘটনা আছে,সে গভীর রাতে খেলা দেখতো ২ মিনিট আবার খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়তো ২ মিনিটের মধ্যে।
আমরা আমাদের দুজন মিলে ঘুড়েছি অনেক জায়গায়,
একবার আমরা দুজন এবার কিছু বন্ধু মিলে ট্রেনে করে এক জেলা অন্য জেলায় খেলতে চাচ্ছিলাম,সেই সময় ঘটে এক ঘটনা, রিয়াদ ট্রেনে যাওয়ার সময় ঘুমুয়ে পড়ে,
এসময় ট্রেনে হিজড়া এসে সবার কাছে টাকা চায়,রিয়াদ হিজড়াদের খুব ভয় পেতো,আর আমরা সবাই পরিকল্পনা করে হিজড়াদের দেখিয়ে দেই তার দিকে, যখন হিজড়া রিয়াদকে ডেকে তোলে টাকার জন্য তখন সে ঘুম ভেঙ্গে চোখ খোলার পর যেনো চমকিয়ে উঠে,এমন চোরে চিৎকার মেরেছিলো যে ট্রেনে ঐ বগিতে থাকা সবাই চমকিয়ে উঠেছিলো।
আমাদের এতো ভালো সম্পর্ক ছিলো যে আমরা পরীক্ষার আগে একবইকে দুই অংশ করে পড়তাম,ক্লাশে আমাদের রোলও ছিলো কাছাকাছি আমরা সিলেবাসের অর্ধেক করে ভাগ করে পরে পরীক্ষার হলে যেতাম। সেখানে গিয়ে কোনমতো পার্শ মার্ক উঠানোও ছিলো আমাদের লক্ষ্য।
প্রতিবছর দামি রেস্তোরাঁ গুলোয় একবার করে খেতে যাওয়া ছিলো আমাদের অভ্যাস,যেখানে আমরা কে বেশি খেতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা করতাম,আর বিল দেওয়ার সময় হাজারো হিসাব মিলাইতাম কে কতো টাকা করে খেয়েছে,অবশেষে বিলটা কিন্তু সমানেই দেওয়া হতো।
কলেজ জীবনে কোন বন্ধুর জন্মদিন পালন হতো সেই রকম মজা করে,আর রিয়াদের জন্মদিন আমি আরও চেষ্টা করতাম বেশি আর্কষনীয় করতে,আটা,আবির,ডিম এমন কিছু নাই যেটা দিয়ে আমি ওর জন্মদিনে ওর গায়ে জুড়ে মারিনি।কেক খাওয়ার বদলে মাখিয়ে দিয়েছি তার দেহে।
দেখতে দেখতে আমাদের কলেজ জীবন শেষ হয়ে গিয়েছিলো,দুজন দুজনার হাসি-দুঃখগুলো ভাগাভাগি করে নিতে নিতে কখন যে এতোগুলো সময় চলে গেছে তা বুঝে উঠতে পারিনি,যেদিন কলেজের শেষদিন ছিলো সেদিন রিয়াদ আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখের জলগুলো লুকিয়ে বলেছিলো,বাস্তবতা অনেক কঠিন রে,আজকে আমরা চলে যাচ্ছি কিন্তু আমরা এখন বুঝবো না যে আমরা কাকে কতটা বেশি ভালোবাসি,যখন দেখবি কিছুদিন দুজন দুজায়গায় আছি তখন বুঝবি আমাদের সম্পর্কটা কি ছিলো,
মিস করবো তোকে।
রিয়াদের শেষ কথাটা ঠিক হয়েছিলো,রিয়াদ এখন চাকরি করে আর আমিও অন্য জায়গায় চাকরি করি,ফলে আমাদের দেখা হয়না অনেকদিন ধরে,।দেখা হয়না বলে আমাদের দুজনের প্রতি ভালোবাসে আটকিয়ে নেই,ভুলি নি আমি তার জন্মদিনের কথা,ভুলিনি আমি তার সোজা চোখে ঘুমঘুম ভাব।
প্রার্থনা থাক তার প্রতি,সে যেখানে থাক ভালো থাক,
আরও কয়েকবছর যেনো তাকে জানাতে পারি ভালোবাসার বহিঃপ্রকা, জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
শুভ জন্মদিন রিয়াদ বন্ধু।