আমার একটা বন্ধু আছে।ওর নাম জীবণ। দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ অনেক ভালো।ছাত্র হিসাবেও অনেক ভালো।খেলাধুলায় ভালো পাড়ে।খেলায় অনেক নাম ডাক ওর।ব্যাটে বলে ভালোই চালায় ছেলেটি।তবে নিয়ম করে খেলেনা ও।
আবার প্রেম এ বিশ্বাসী না,আবার প্রেমেও পড়তে চায়,বলা বাহুল্য ছেলেটি আসলে কি চায়।অদ্ভুত ধরতে গেলে ও।তবে ওর কিছু জিনিস আমার ভালোলাগে বা মাঝে মাঝে আমার কাছে শেয়ার করে তারি কিছু গল্প তুলে ধরলাম,
প্রতিরাত্রে নিয়ম করে নাকি একটা ৫০ টাকার মোবাইলের কার্ড কিনতো ও ।
৫০ টাকার জিপি কার্ড, বেশিওনা-কমওনা । তো সেই কার্ড ফোনে ভইরা সে যে কোন পরিচিত মেয়েকে রাত্রে ফোন দিতো, দিয়া ঐ টাকা দিয়ে যতোক্ষণ কথা বলা যায়, হাবিজাবি কথা বলতো । কোন প্রেমালাপ না, ফ্লার্টিং না – হুদা প্যাচাল ।
একদিন আমি ওকে প্রশ্ন করলাম!- 'দোস্ত, প্রতিরাতে এই কাম করিস ক্যান ?'
ও খুবই বুদ্ধিমানের মতো করে একটা উত্তর দিসিলো আমাকে। ও বলসিলো – সে ‘ওয়াক্ত’ খরিদ করে ।আমি শুনে কেমন যেন থমকে গেলাম।বুঝলাম না তোর কথা আবার বল।ও কথাটি আবার বললো।আমি আবারো শুনলাম।
ওর চেহারাসুরত অনেক ভালো আগেই বলেছিলাম। সব মেয়েরা ওর সাথে প্রেম করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু ওর কথা আমি প্রেম করবোনা বাট কথা বলবো ফোনে। তাই ঐ প্রতিদিন ৫০ টাকার কথা বলতো যেকোন একটা মেয়ের সাথে।কথা বলে শেষ হলে নাকি ও অনেক মজা আর আরাম পাইতো।আমাকে হাসতে হাসতে তাই বলতে লাগলো।আমিও ভাবতাম এবার কেমন মজা আর শান্তি!যাইহোক যার যেখানে শান্তি যেখানে আরাম আমার বলে বা বুঝে কোন লাভ নাই।
আবার কথা বলা শেষ হলে ওর নাকি এটাও মনে হতো আমারও কেউ আছে ।কি অদ্ভুত না বিষয়গুলো! ও আমারে এটাও বলে যখন ও প্রেমিকা ভাত খাইসে কিনা সেই হিসাব নিকাশ করতো, ও নাকি কোন লোনলি ফিল করতো না । কিন্তু, ও আবার নাকি এই কথা বলার খাতে খুব বেশি বাজেটও বরাদ্দ রাখাতোনা কারণ ৫০ টাকাই ওর কাছে অনেক।সবি বলতো আবার মাঝে মাঝে এটাও বলতো,হা হা হা।
আমাদের ফ্রেন্ডলিস্টের ৯০% মানুষ আমাদের ভালো ফ্রেন্ড হয়ে উঠতে পারে না । তারা কখনো বা ফেসবুকে কখনো বা সামাজিক যোগাযোগ বা বাস্তব লাইফে দেখবেনে মাঝে মাঝে এমবি কিনে ‘ওয়াক্ত’ খরিদ করেছে । আমাদের গ্রামের ভাষায় বলে ‘তামশা’ দেখার জন্য ফেসবুক,সামাজিক যোগাযোগ এইসব কিছু আছে। এখনকার ছেলেমেয়ের এইসবে বেশি আসক্ত।যা বলার বাহিরে।ফেসবুকে বাংলাদেশের সমাজটাকে অনেক খারাপ একটা অবস্থানে নিয়ে চলে গেছে যা মুখের ভাষায় আর প্রকাশ করা যাচ্ছেনা।যখন যে যেভাবে পাড়ছে সেইভাবে ইউজ করছে সেটা।
ভাই বিশ্বাস হলোনা!কথাগুলো একবার ভালো করে ভেবে দেখেন,
মাইন্ড করলেন ? আসেন প্রমাণ দেই ।
আপনি কোয়ারেন্টাইনের সময়ে বিয়া করসেন ক্যান, হোমপেজ খুললেই খালি বিয়ে হওয়ার গল্প – এই হাহাকার শুনতেসি বিগত একমাস ধরে । এখন, এই আলাপ যারা দিতেসে, তারা কিন্তু এমন ক্লোজ কেউ না । তারা খালি কাচ্চি খাইতে চায় । এবং কাচ্চি খাইয়া আপনার বউ / বর কালা এবং কাচ্চি আর আগেকার মত নাই বলতে চায় ।
অথচ এই লোকগুলোর এ্যাপ্রুভালের আশায়, প্রেইজের জন্য আপনি খাইতে গেলে খাওন বাদ দিয়ে আগে ছবি তুলেন ।বলেন ঠিক কি না?
আপনার কালকে রোড এ্যাক্সিডেন্ট হোক , ক্যান্সার হোক , করোনা হোক - আপনি যদি পোস্ট দেন আপনার জরুরী রক্ত লাগবে , প্লাজমা লাগবে, টাকা লাগবে । ট্রাস্ট মি, এদের কাউরে খুইজা পাইবেন না । খুইজা পাওয়া দুরকা বাত, আপনার পোস্ট তাড়াতাড়ি স্ক্রোল করে নিচে চলে যাবে, এইসব পোস্ট ‘এ্যাটেনশন’ পাওয়ার যোগ্য না ।
আমার এক পরিচিত মানুষ একবার বলেছিলেন, তার মায়ের কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের ফান্ডরেইজিং ইভেন্টে গোয়িং দিয়েছিলো আড়াই হাজার, টাকা উঠেছিল সর্বমোট পাচ হাজার ।
আপনি নতুন ব্যবসা শুরু করেন - আপনার সামনে আপনার কম্পিটিটর থিকা প্রোডাক্ট কিনবো আপনার ফেসবুকের বন্ধুরা । আপনি ফকিরের মত রিভিউ চাবেন - তারা তারথিকাও বড় ফকিরের মত ফ্রি সার্ভিস চাবে । আপনাকে বিয়াতে দাওয়াত দিবে ফ্রি ছবি তুলে দেওয়ার জন্য, আপনার রেস্টুরেন্টে যাবে ফ্রি ডিশ পেতে , আপনার অনলাইন শপে নির্লজ্জের মত ডিসকাউন্ট আর গিফট আশা করবে । আপনার অবর্তমানে আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করবে, হাসাহাসি করবে । যার সাথে আপনার চিরশত্রুতা, তার কাধে হাত রাইখা বার্থডে পার্টি করবে । এখন রিয়েল লাইফ বন্ধুদেরই এই অবস্থা, ভার্চুয়াল লাইফের বন্ধুদের কথা আর নাই বলি ।
অথচ, আপনার মনে কতোই আনন্দ, আমার অনেক বন্ধু । আমার ফেসবুকে অনেক ফলোয়ার ।
বন্ধু চেনাটা খুবই জরুরী । সমস্যা হল, এই চেনাটা সহজ না । যেদিন আপনার পকেটে পয়সা থাকবে না, চাকরি থাকবে না, সম্মান থাকবে না, যেদিন তারকাছে আপনার প্রয়োজন থাকবে না – সেইদিন সময় দুইগালে কষে একটা চড় দিয়ে দেখবেন চিনায় দিয়ে গেসে কে আপনার বন্ধু ।
এরইমধ্যে জীবনে চলতে চলতে , চড় খাইতে খাইতে দেখবেন কিছু অসভ্য মানুষ থাকবে আপনার চারপাশে যারা নো ম্যাটার হোয়াট আপনার সুখে-দু:খে আপনার লগে থাকবে । তাদের সাথে দেখবেন দিনের পর দিন দেখা হবে না, কথা হবে না । কিন্তু, আপনার বিপদের দিনে দৌড়াইতে দৌড়াইতে হাজির হবে । আপনি যতো অসুন্দরই হন, এরা আপনাকে ভালোবাসবে; শুধুমাত্র আপনার জন্য, কোন ‘ওয়াক্ত’ খরিদ করার জন্য না ।
এই মানুষগুলারে হারায়ে যাইতে দিয়েন না কখনো । কখনো এমন কিছু কইরেন না, যাতে তারা মনে কষ্ট পায় । নিজের কমফোর্ট জোন থেকে একটু বাইর হতে হলেও, এদের জন্য দরজা কখনো বন্ধ কইরা দিয়েন না ।
আর মাথায় রাইখেন, ফেসবুকের বন্ধু হৈতাসে মনোপলির টাকার মতো, দেখতে খুবই সুন্দর লাগে, লাইক দিলে মজা লাগে – কিন্তু কামের সময় কোন কামেই লাগে না । যারা আপনার পোস্টে লাইক দেয়, তাদের অধিকাংশই আপনাকে ঠিক লাইক করে না । যারা আপনার ছবি শেয়ার দেয়, তারা অধিকাংশই আপনার জীবন নিয়ে কেয়ার করে না ।
আপনার বিয়ের কাচ্চি তাদেরই প্রাপ্য, আপনার লাশের খাটিয়ায় যাদের কাধে থাকবে ।
তাই সবার আগে বন্ধু চিনুন,বন্ধু চেনা অনেক জরুরি।লাইফে সব কিছুই লাগে পাশাপাশি একজন ভালো ফ্রেন্ডও লাগে।হাজার বন্ধুর থেকে একজন প্রকৃত বন্ধু থাকাই অনেক ভালো।