"ইটের পর ইট, তার উপর মানুষ কীট", কিংবা 'দাও ফিরে সেই অরণ্য, লও এই নগর" রাবিন্দ্রনাথ অরণ্যকে ফিরিয়ে দেওয়ার যে আকুতি জানিয়েছেন ১০০ বছর আগে হলেও তার আবেগ কিংবা আবেদন কোন অংশে এখনো কমেনি বরং বেড়েছে কয়েকশো গুন!
আমরা যারা নিজেদেরকে আধুনিক ভাবতে পছন্দ করি, কিংবা নিজেদেরকে কসমোপলিটান ভেবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে জানান দে ট্যাক ভ্যালির রঙিন জামানায়। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় লাভ ক্ষতির হিসেব এখন আগের চেয়ে দ্রুত ও নির্ভুল ভাবে করা যায় বলে আমরা এখন আর সবুজ অরণ্য নিয়ে ভাবিনা। আমরা ইট পাথরের দেয়ালে মোবাইল ফোনের মনিটর কিংবা ল্যাপটপে, ডেস্কটপের রঙিন আলোয় আলোকিত হতে বরং স্বাচ্ছন্দ বোধ করি।
প্রযুক্তি আমাদের চিন্তা চেতনা ও বদলে দিয়েছে, এখন আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবিনা, পরিবেশ চুলোয় যাক, আমাদের ইনকাম ঠিক মতো হলেই চলবে। সবাই এখন শর্টকাটে বড়োলোক হওয়ার ধান্দায় মত্ত। ভোগবাদী মন আমাদেরকে এমন করে চিন্তা করায়। আমরা ও নতুন গেজেট, জীবন ধারনের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল জিনিস পত্র কিনে নিজের স্ট্যাটাস জাহির করছি!
আমরা নিজেরা তো এগিয়ে থাকতে চাই প্রযুক্তির দুনিয়ায় সাথে আমাদের ছোট্ট কোমলমতি ছেলেমেয়েদের ও। তাই জন্মের সাথে সাথে ওদের হাতে তুলে দি মোবাইল ফোন। ওরা গেম খেলে, ইউটিউব দেখে আর আমরা মা-বাবারা অন্য গার্ডিয়ানদের বলে বেড়াতে পছন্দ করি জানেন আমার সন্তান তো ৪ বছর বয়সে ফোনের সব কিছু বুঝে, সব গেম খেলতে পারে!
ট্যাক জায়ান্ট বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ ওনারা কিন্তু ওনাদের সন্তানদের ট্যাকনোলোজি থেকে দূরেই রাখে। বিল গেটস তাঁর সন্তাদের ১৪ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোন দেননি। আর আমরা কী তার খবর রাখি, না মেনে চলি?
আমাদের ছেলেমেয়েরা বাড়ির আসেপাশে যে কয়টা গাছগাছালি আছে তার নাম ঠিক মতো না বলতে পারলেও বাজারে সবচেয়ে আপডেট ফোনের খবর দিতে পারবে।
আচ্ছা আমরা কী কখনো আমাদের সন্তানদেরকে নরম ঘাসে আদুল পায়ে হাটতে দিছি, কখনো বৃষ্টিতে ভিজে স্কুল থেকে আসতে দিছি, বাস্তব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে দিছি?
শুধু ছোটদের দোষ দিয়ে কী লাভ, আমরা বড়োরা কতোটা পরিবেশ, পরিবার নিয়ে সচেতন? আমরা যেতো টুক সচেতন হতে পারছিলাম তার সবটুকুতে জড়িয়ে আছে আমাদের নিরমল শৈশব, বাঁধাহীন উল্লাস। আমরা কী সে শৈশব ফিরিয়ে দিতে পারবো আমাদের সন্তানদের, নাকি নিজেরাই নিজেদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো!
Source Pixabay