আব্বা আমারে এক প্লেট চটপটি দেওনা! হেই দুপুর বেলায় মা কয়ড়া ভাত দিছে সেই ভাত কয়ড়া ফেটের ভিতর কী আছে তুমিই বলো? যা ভাগ৷ এখন কাস্টমারের ভিড় পরে আস, ধমক দিয়ে জাফর তার ছোট মেয়ে রোখসানাকে বলে। রোখসানা চোখ ডলতে ডলতে বাড়ি চলে যায়। জাফর তুমি মাইয়াডারে এক প্লেট চটপটি দিলে তোমার কী ক্ষতি হতো, পাশ থেকে বলে উঠে রহিম মিয়া। দূর মিয়া কথা কম কও, তোমার এতো টান দেখাতে হবেনা। আলগা ভাব দেখাইবার লাগছো কেন রহিম মিয়া পাশ থেকে কাসেম উত্তর দে।
নিজের চরকায় তেল দাও কিছুটা রাগ মাখানো ভঙ্গিতে জাফর চা দোকানী রহিমকে বলে। নিজের চরকায় নিজেই তেল দিচ্ছি তা তোমারে কইতে হবেনা, ভালো কথা কইলে ভাদ্রমাসের কুত্তার মতো ঘেউঘেউ করে উঠো কেন, রহিম প্রশ্ন করে জাফরকে। জাফর উত্তর দেয়না। সে বলে যদি নিজের চরকায় তেল দাও তাহলে তোমার চুলার আগুন যে নিভে গেছে তার খবর রাখো না কেন?
রহিম চুলায় ফুকতে ফুকতে বলে আজকাল কী যে হলো কোন কিছু খেয়াল রাখতে পারিনা। তো জাফর ভাই তোমার মনটা কী খারাপ নাকি? সারাক্ষণ কী ভাবো? চটপটির প্লেট কাস্টমারের হাতে তুলে দিয়ে জাফর বলে বড় মেয়েটা কলেজে ভর্তি হবে টাকা লাগবে, মেঝো মেয়েটা সামনে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। চটপটি বেচা কিনা করে কয়টাকা আয় হয় বলো রহিম ভাই।
জাফর ভাই তুমি মিয়া কামের কাম করতেছো, মাইয়াগুলানকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করতেছো রহিম মিশা পানের পিক ফেলতে ফেলতে বলে। তা তোমাগো সবার দয়া আর উপর ওয়ালার ইচ্ছা জাফর জবাব দে। তুমি মিয়া চিন্তা কইরো না যে কয়টাকার কমতি হবো আমরা সবাই মিলে এক ব্যবস্থা করে দিবোনি রহিম জাফরকে আস্বস্ত করে।
রাত প্রায় নয়টা বাজতেই লোকজন কমতে শুরু করলো, গ্রামে রাত নয়টা মানে অনেক রাত। এমন সময় কাশতে কাশতে দোকানে কাসেম সাহেব আসে। কাসেম সাহেব মসজিদের ইমাম, সবাই অনেক ভক্তি করে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে কেউ তাকে পছন্দ করেনা। অপছন্দ করার মূল কারণ হলো তার স্বভাব চরিত্র তেমন সুবিধার নয়। সে বলে জাফর শুনলাম তোমার মেয়ে নাকি কলেজে ভর্তি হতে চায়, হ হুজুর ভর্তি হবার চায়, তার জন্য একটু দোয়া কইরেন জাফর উত্তর দে। তা করবোনি, তো তোমার মেয়েটারে একটু পাঠাই দিয়ো, দোয়া করে দিবোনি। জাফর বুঝতে পারে তার ইঙ্গিত। সে পেঁয়াজ কাটার ছুরি নিয়ে কাশেমের গলায় ধরে বলে মাদারচোদ তোর ইমাম ঘিরি গলাদিয়ে নামাই দিবোনি আর যদি এমন আচরণ করিস। এর মধ্যে রহিম এসে কিছু উত্তম মধ্যৃ দিয়ে ছেড়ে দে কাশেমকে।এরপর থেকে কাশেম হুজুরকে আর ঐ এলাকায় দেখা যায়নি।
রাত প্রায় দশট বাজতে লাগলো তার ছোট মেয়ে আর আসেনা চটপটি খেতে, জাফরের খুব মন খারাপ হয়।
চোখে জল আসে জাফরের, তা সে আড়াল করার শতো চেষ্টা করে ও পারেনা। এদিকে সবাই দোকান বন্ধ করতে শুরু করলো, এমন সময় জাফর, মাষ্টারের বইয়ের দোকানের দিকে বউ দৌঁড় দিয়ে তার মেয়ের জন্য একটা লালা টুকটুকে শিশুতোষ বই কিতে যায়। মাষ্টার তার কাছ থেকে বইয়ের দাম রাখেনা।
Source Pixabay