কামরাঙা গাছটিকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে তেঁতুল গাছটি। এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে সবাই মবে করবে একজন আরেকজনের আজন্ম শত্রু। দূর থেকে দেখলে মনে হয় সরকারি দল আর বিরোধী দল। বাহির থেকে যতোই সরকারি দল আর বিরোধী দল মনে হোক ওদের মাঝে ব্যাপক ভাব। ঝড় তুফান আসলে তো কোন কথাই নেই ওদের তখন গলায় গলায় ভাব! রহমান সাহেব তেঁতুল গাছকে পছন্দ করেনা, কিন্তু তেঁতুল দেখলে আবার জ্বিবে জল আসে! রহমান সাহেব তেঁতুল গাছকে না দেখতে পারার একটা কারণ আছে, তা হলো তেঁতুল গাছে না-কি ভুত থাকে তাই। আর ভুত হলো হিন্দু রহমান সাহেবের বদ্ধমূল ধারণা। হিন্দু মানেই মালাউন, আর রহমান মালাউন দেখতে পারেনা।
তেঁতুল গাছকে না দেখতে পারার আরেকটা কারন হলো লাল পিঁপড়ে, ধর্মান্ধ রহমান লাল পিঁপড়ের মাঝেও খুঁজে ধর্ম, হিন্দু না মুসলিম! এইসব কারনে পেয়ারা রহমান সাহেবের পছন্দ না হলেও পেয়ারা গাছে কালো পিঁপড়ে থাকে বলে, কালে পিঁপড়েরা না-কি মুসলিম হয় সেই কারণে। রহমান সাহেব হিন্দুদের এমনই ঘৃণা করে যে হিন্দুদের উঠতে বসতে মালাউন বলে।
রহমান সাহেব একবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে গেলো হেলাল চেয়ারম্যানের কাছে। রহমান সাহেবের ধারণা হিন্দুরা তাকে ভোট না দেয়াতেই তিনি হেরে গেলেন তখন থেকেই তিনি হিন্দুদের দেখতে পারেন না। নির্বাচনে হেরে সবার প্রথমে রহমান সাহেব তেঁতুল গাছটাকে কাটতে যায় কিন্তু ওনার স্ত্রীর আপত্তিতে কাটতে পারলেননা। গাছ কাটতে না পারলেও তেঁতুল গাছের ক্ষতি সাধন করার জন্য সব রকম চেষ্টাই করলো রহমান সেই। কিন্তু বিধি বাম! সর্ব শেষ চেষ্টার অংশ হিসেবে তেঁতুল গাছকে আড়াল করে পেয়ারা গাছ লাগানো।
রহমান সাহেব মুখে যতই মালাউন করুক নিজের স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে হলে কিন্তু ঠিকই হিন্দু ডাক্তার খুঁজে। রহমান সাহেবের বিশ্বাস হিন্দু ডাক্তার মেয়েদের শরীরে চোখ দিয়ে গিলে খায় না। আর অপ্রয়োজনে যেখানে সেখানে হাত দে না! আট নিজের চিকিৎসা তো ভারত ছাড়া রহমান সাহেব কোনদিন দেশে করিয়েছে কিনা সন্দেহ।
রহমান সাহেবের দুই ছেলে আর এক মেয়ে। দুই ছেলে আমেরিকায় সপরিবারে থাকে। বিয়ে করছে সেদেশের মেয়েকে নাগরিকত্বের আশায়। রহমান সাহেবের এতে কিছু যায় আসে না। তার ছেলেরা আমেরিকার নাগরিক এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। যদিও উনি অন্য অনেকের মতো আমেরিকাকে ইসলামের শত্রু মনে করে এবং ইসরায়েলের অনুসারী ভাবে।
রহমান সাহেবের মেয়ের মন খারাপ, সে বারান্দায় বসে কাঁদছে, তাকে সামান্য ঘুঘু পাখি নিয়ে আহ্লাদি হতে দেখে রহমান সাহেব বলে উঠে তোকে না বলছি এই বাসায় হিন্দুয়ানি চলবেনা। রহমান সাহেবের ধারণা পাখিদের মাঝে ও হিন্দু, মুসলিম আছে!
Source Pixabay