আসসালামুয়ালাইকুম বন্ধুরা,
সবাই অনেক ভাল আছেন আশা করি।
আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
এই পৃথিবীতে স্বামী স্ত্রী, পিতা মাতা ও সন্তানের বন্ধন এর চাইতে অতি আপন কোন সম্পর্ক নেই। কারণ একমাত্র পিতা-মাতা ই নিঃস্বার্থ ভাবে প্রতিটি সন্তানের মঙ্গলের জন্য নিজের জীবন উজাড় করে দিতে পারে। তেমনি একটি বাস্তব ঘটনা আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
আমার আপন খালা ,যিনি আজ থেকে ৩৫/৪০ বছর পূর্বে মেট্রিক পাস করেছিলেন। তার মানে তিনি সে যুগের অনেক শিক্ষিত একজন মানুষ। তিনি তার বিবাহিত জীবনে অনেক সুখী ও তিন সন্তানের গর্বিত মা। গর্বিত মা এ কারণেই বলছি, তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
বড় মেয়ে ও একমাত্র ছেলে দু'জনেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে এখন দুজনেই অনেক বড় ডাক্তার ।আর সবচেয়ে যে ছোট মেয়ে, পরিবারের সবার অতি আদরে পড়াশোনায় সে অমনোযোগী হয়ে উঠেছিল। তাই কোন ভাবে এ প্লাস পেয়ে এইচএসসি পাস করে। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে সে তার দুই ডাক্তার ভাই বোন এর সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। কিন্তু সে মেডিকেলে চান্স পেল না প্রথম বারের মত। কারণ কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েও সে সারাক্ষণ স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। তার এই ব্যর্থতায় তার বড় ভাই ও বোন দু'জনেই তাকে অনেক কটাক্ষ ও বিদ্রুপ করে। এতে ছোট বোন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে।
সে হতাশায় ভুগতে থাকে, আদৌও কি সে কোন ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে?? আর যারা মেডিকেল কোচিং করে তাদের ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় তেমন কৃতকার্য হবার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
তার জীবনের এই চরম দুর্দিন স্নেহ মাখা হাত বুলিয়ে দেন তার বাবা-মা। আর অন্য ৮-১০ বাবা-মা এর মতো তাকে কটাক্ষ ও বিদ্রুপ না করে বরং অভয় দিয়েছে।সাহস জুগিয়েছে তার মনে। খালা ও খালু তাকে বলেছিলেন, একটি কবিতা আছে না! একবার না পারিলে দেখ শতবার। তো তোমার তো এটা শুধু প্রথম বারের ব্যর্থতা। দ্বিতীয় বারের জন্য তুমি আবার চেষ্টা করো, পড়ালেখায় মনোযোগ দিয়ে উঠেপড়ে লেগে যাও।দেখবে তুমি সফল হবেই হবে।
আমার খালাতো বোন টা তার নিজের বাবা মা এর মুখে এই অভয় বানী শুনে সত্যি সত্যিই মোবাইল, টিভি সব কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় । তারপর সে প্রতিদিনই ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ১২/১৫ ঘন্টা পড়ালেখা করা শুরু করে দিয়েছিল।
তারপর আবার বছর ঘুরে ভর্তি পরীক্ষার সময় এসেছিল
। সে আবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। ২/৩ দিন পরে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে সে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। সে দেশের সেরা মেডিকেল কলেজ অর্থাৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেধাতালিকায় ১৫ তম স্হান দখল করেছিল।
তার এই রেজাল্ট এর কয়েক দিন পরে সে যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করেছিল, সেখান থেকে কোচিং সেন্টারের পরিচালক এসেছিল তার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য। তাকে পরিচালক প্রশ্ন করেছিল, তোমার এই সফলতার রহস্য কি? কারণ আমাদের কোচিং এ অনেক ছাত্র ছাত্রী ই আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন সফলতা দু চার জনের মধ্যে ই আমরা পেয়েছি। তখন না কি আমার খালাতো বোন উত্তরে বলেছিল, আমার এই সফলতার সব ক্রেডিট আমার বাবা মায়ের। তাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা আমাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে গেছে।
আমাদের কে এসব কথা পরে আমার খালাতো বোন টা সবাইকে বিস্তারিত ভাবে বলেছিল।
করোনা ভাইরাস আসার আগের বছর সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে এখন উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করছে।আর তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিদেশে গিয়ে আর ও কিছু ডিগ্রি অর্জন করে নিজের দেশে ফিরে এসে জনগণের সেবা করবে।
***আমার এই পোস্ট টা করার উদ্দেশ্য হলো বর্তমানে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে।এই ভর্তি পরীক্ষা নামক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অনেক শিক্ষার্থী কৃতকার্য হবে। আবার অনেকেই অকৃতকার্য হবে। তাই যারা অকৃতকার্য হবে তারা হয়তো কারো সন্তান,ভাই বোন, ভাগ্নে, ভাতিজা ।এই পরাজিত সৈনিকদের কে কোন ভাবেই কেউ আহত করবেন না, কটাক্ষ ও বিদ্রুপ করবেন না। বরং তাদের এই দুঃসময়ে পাশে থাকলে তারা আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে এবং আগামী বছরে তাদের সফলতা আমাদের কে তাক লাগিয়ে দেবে।
আর একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শেষ করবো আমার পোস্ট টা।
এবারের ভর্তি পরীক্ষার একজন সৈনিক আমার নিজের ভাগ্নেও। গত কয়েক দিন আগে রাজশাহীতে ভর্তি পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করে।২/৩ পরে রেজাল্ট প্রকাশ পেলে আমরা জানতে পারি মেধাতালিকায় তার সিরিয়াল অনেক পেছনে।মানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ তার নেই। এতে তার বাবা তাকে বকাঝকা করে। অথচ তার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা। তবুও এতটা অবুঝ হয়ে গেছে। সন্তানের ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করেই হয়তো উনি নিজেই খুব অসহায় বোধ করছেন। তাই এমন টা করতে পেরেছেন সন্তানের সঙ্গে। যাই হোক, আমার ভাগ্নে চান্স না পাওয়ায় এবং তার বাবার বকাঝকায় সে না কি রাতের বেলা সুইসাইড করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে সুইসাইড মহাপাপ মনে হতেই দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে জোর করে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে উঠে তার মনের এই অবস্থার কথা আমাদের সাথে শেয়ার করে।
তাই সাবধান বন্ধুরা, ভর্তি পরীক্ষার এই পরাজিত সৈনিকদের কোন ক্রমেই আঘাত না করে মায়া মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিয়ে বুঝিয়ে আগামী বছরের জন্য তৈরি করুন তাকে বা তাদেরকে।