গ্রামে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই পুকুর থাকে। এটা আমার দাদা বাড়ির পুকুর। এই পুকুরে আমাদের ভাগ রয়েছে। এই পুকুরের পানি সেচে কখনও একেবারে পানি শেষ করা হয় না । কারণ পুকুরটি অনেক বড়। আপনারা ছবিটি দেখলেই বুঝতে পারবেন।
এই ছবিটি দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন, আমাদের পুকুরে জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়েছিল। আমি এই ব্লগে গ্রাম বাংলার মাছ ধরার নিয়ম ,কিভাবে মাছগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়, কিভাবে পুকুরে সঠিকভাবে নামা হয় এবং সবশেষে কিভাবে ভাগ করা হয় সবকিছু তুলে ধরবো। তো শুরু করা যাক।
মাছ ধরার জন্য সবার প্রথমে মাঝিরা পুকুরে দেখে যে কাডাল রয়েছে কিনা। কাডাল মূলত গাছের ডাল- মূল পুকুরে দেয়া হয়,যাতে করে মাছগুলো সেখানে এসে তাদের বংশ বিস্তার করতে পারে। কিন্তু মাঝিরা যখন জাল ফেলবে ,তখন তাদের জালে এসব কাডাল লেগে জাল ছিঁড়ে যেতে পারে। তাই তারা সবার প্রথমে পুকুরে নেমে কাডাল তোলে।
এই ছবিটিতে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন দুইজন মাঝি পুকুরের মধ্যে একটি রশি জাতীয় কিছু রেখেছে। মূলত তারা এটা দিয়ে চেক করতেছে যে ওখানে কাডাল রয়েছে কিনা। এরপর তারা সেসব তোলে। এটা চেক করতে মূলত বেশিক্ষণ সময় লাগে না। এটা চেক করতে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগে।
এরপর তারা জাল গোছায় এবং পানিতে নেমে পড়ে। দুইজন মানুষই অনেক বিশাল পুকুর মারতে পারে। তাছাড়া জালের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আমরা একবার পুকুর মারবো। তাদের সাথে দরকষাকষির মাধ্যমে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এখানে দেখুন একজন মাঝি, এক কিনারায় জাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্যজন জাল নিয়ে অন্য কিনারায় যাচ্ছে। যেহেতু একেবারে পুকুরের সব মাছ ধরবো না,তাই কিছুটা কিনারার পাশ দিয়েই তারা জালটা নিয়েছিল।
এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। সেটি হলো , আপনারা ছবিটি একটু ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন ,একজন মাঝি জালের মাঝখানে রয়েছে। কারণ হল একটি কাডাল তাঁরা খেয়াল করেনি এবং সেটি জাল এর মধ্যে বেধে গিয়ে ছিল। এবং যার ফলে জাল ছিঁড়তে ধরেছিল, তাই সে লোকটি সেখানে গিয়ে সেটি বের করে দেয়।
একেবারে শেষ পর্যায়ে এ সময় একটু বেশি শক্তি দেয়ার প্রয়োজন পড়ে, কেননা মাছ এসময় বাঁধা থাকে। পাশাপাশি মাছ লাফ দিয়ে বেরিয়ে যায়। অনেক বড় বড় মাছ বেরিয়ে যায়।
দেখুন এবার কতগুলো মাছ জালে ধরা পড়েছে। মাছ বাছাই চলতেছে। কারণ এসব মাছই আবার বড় হয়,মাছের পোনা থেকে। পাশাপাশি সিলভার এবং কার্প মাছ ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। যাতে করে এসব মাছ আবার বড় হয় ডিম পাড়তে পারে। অনেক বিষয় চিন্তা করেই মাছ ধরা হয়। এটা হলো মাছ বাছাই প্রক্রিয়া।
পুকুরের মাছ ধরা শেষ। এবার আসি মাছ ভাগ করার বিষয়ে
দেখুন ভাগীদাররা কিভাবে মাছ এর জন্য বসে আছে, দাঁড়িয়ে আছে। এখন সময় প্রায় দুপুর ২ টা।
অনেক মাছ পুকুরেই ছেড়ে দেয়া হয়। তারপরও এসব মাছ আমরা পেয়েছিলাম। দুইটি শৈল মাছ,সিলভার কাপ মাছ ,বাটা মাছ, সরপুঁটি মাছ, পাঙ্গাস মাছ এবং কিছু পোনা মাছ পেয়েছিলাম।পোনা মাছ গুলো শুধুমাত্র আমাদের জন্যই তোলা হয়েছিল,তবে অন্যদেরও দিতে আমরা বাধ্য হয়েছিলাম পেয়েছিলাম।
এখানে দেখুন মাস কেটে কেটে টুকরা করা হয়েছে। কারণ হলো মাছের ভাগীদার।
এই পুকুরে প্রথমত দুইটি ভাগ। একটি আমার দাদার এবং আরেকটি আমার দাদার ভাইয়ের। তো সবার প্রথমে মাছগুলো দুইটি ভাগে ভাগ হয়ে থাকে। এরপর আমার আব্বুরা ৭ ভাই। তাই সেই একটি ভাগ থেকে আবার সাতটি ভাগ করা হয়। আমাদের ভাগে ছিলো ২০০ টাকা। তারপর ২০০÷৮=২৮.৫৭ টাকা করে পড়েছিল। অর্থাৎ প্রায় ৩০ টাকা।
তারপর আমরা মাঝিদের বিদায় করলাম। মাঝিদের আমরা মোট ৪০০ টাকা, একটি বড় মাছ এবং কিছু পোনা মাছ দিয়েছিলাম। তারা সন্তুষ্ট ছিল।
এত ভাগ করার পরে আমরা খুবই স্বল্প পরিমাণ মাছ পেয়েছিলাম। তবে পেয়েছি এটাই অনেক। আমরা শহরের বাসায় থাকি গ্রামে মাঝে মাঝে যাই। অনেক সময় আমাদের ভাগ ও দেয়া হয় না। তবে যেহেতু আমরা মাছ ছাড়ার সময় টাকা দেই, সে হিসেবে আমাদের একটি ভাগ রয়েছে। আমরাও মাছ খেয়ে সন্তুষ্ট ছিল। তবে চাইলে আরো মাছ পাওয়া যেত, অনেক মাছ ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
আমাদের কুড়িগ্রামে এভাবেই মাছ ধরা হয়। বর্তমানে মানুষ বেড়ে যাওয়ায় মাছের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। পাশাপাশি অনেক ভাগ দিতে হয়। সব মিলিয়ে যাই আসে ততটুকুতেই "আলহামদুলিল্লাহ"
বিগত দুই তিন দিন ধরে আমি গ্রামে ছিলাম। সেখানে নেটওয়ার্ক পায়না। কি আর বলব ডিজিটাল বাংলাদেশ,তারপরও নেটওয়ার্ক পায়না। এবং খুবই ব্যস্ত সময় পার করেছিলাম। একটি গ্রামে সন্ধ্যা ৭-৮ টার দিকে রাত হয়, সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। আর আমার রুমে নেটওয়ার্ক পায়না। এবং সারাদিন বাইরেই থাকতে হয় হাঁটাচলার মধ্যে। তাই আপনাদের মাঝে লিখতে পারিনি,তবে আজকে থেকে আবারও শহরে এসেছি। আশাকরি সকলে আমার ব্লগ টি পড়বেন। ধন্যবাদ সবাইকে।