"স্বাধীনতা, সে আমার স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন-
স্বাধীনতা, সে আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।"
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (বাতাসে লাশের গন্ধ)
Source
আজ ২৬ শে মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। এরপর আমরা দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পরে নিজের জীবন দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছিলাম। যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশে কবে থেকে স্বাধীন?তখন উত্তর হবে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে। কারণ এই দিনের স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিছু মূল্যবান কথা বলেছিলেন। যেগুলো আমাদের দেশের জন্য অনেক উপকৃত ছিল।এই ভাষণে আমাদের অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছিল।এই ভাষণে আমাদের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। এইদিন মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা… প্রতিটি জাতির কাছেই শব্দটি এক আবেগের নাম, এক ভালোবাসার নাম। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, গানটি রুপক অর্থে লেখা হলেও, আক্ষরিক অর্থেই কোনো দেশের স্বাধীনতা আনতে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। মানুষ আসলে জন্মগতভাবে স্বাধীন হলেও প্রায়শই এই স্বাধীনতা হরণ করে নেয় কিছু হানাদার দস্যু।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ স্বাধীন। আবার স্বাধীন দেশগুলো জাতিসংঘের সদস্য। আবার অনেক দেশ রয়েছে বর্তমানে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য। এমনকি বিভিন্ন দেশের ভিতরের এক একটি অঞ্চল স্বাধীন হওয়ার জন্য যুদ্ধ করতেছে। পৃথিবীতে খুব কম রাষ্ট্রই রয়েছে যারা যুদ্ধ করার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ যুদ্ধ করার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমাদের স্বাধীনতার মূল্য অনেক বেশি।
আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস একটু বড়। সেই 1947 সালের পর থেকে নানান সমস্যা পেরিয়ে অবশেষে আমরা 1971 সালের 26 শে মার্চ এসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। দীর্ঘ 23 বছর পর আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এর মধ্যে আমাদের কত কষ্টের ইতিহাস রয়েছে। সেসব সবাই জানে, আমার আজকের লেখা সেসব নয়। বরং আমরা কি আজও স্বাধীন? হয়তোবা আমরা হাতে- কলমে, কাগজে স্বাধীন কিন্তু আমরা কি আমাদের অধিকার পেয়েছি। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর আজকে আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনি স্বাধীন?
আমরা জীবনের প্রতিটা পদেই পরাধীন। আমরা কিছুই নিজের ইচ্ছামত করতে পারছিনা।এই ধরুন গতকালের একটি ঘটনা আপনাদের সাথে তুলে ধরছি। গতকাল প্রীতি নামের একটি মেয়ে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছে । এ সময় তার বাবাকে জিজ্ঞেস করা হলে তার বাবা উত্তর দেয়: "আমার মেয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা করবো না। আমরা সাধারণ পরিবারের ও নিরীহ মানুষ,মামলায় কখনো জড়াননি । আল্লাহ আছে একজন, তিনিই দেখবেন।"
এমনকি তিনি বলেছিলেন তার কাছেই বা বিচার চাবো? কতটা পরাধীন হলে একজন বাবা এ কথা বলতে পারেন।
আবার ধরুন বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আমরা সবাই এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির স্বীকার। কিন্তু আমরা কেউ কিছু করতে পারছিনা। সবাই আমরা এটাকে মেনে নিয়েছি।
বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ এটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু জেনে কী লাভ আমরা স্বাধীন নই তাই আমরা কিছুই করতে পারছি না।
নির্বাচনের সময় স্বাধীনতা কথাটি সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখি আমার ভোট আগেই আরেকজন দিয়ে রেখেছে। এমনকি অনেক জায়গায় ভোট দিতেও পারে না মানুষ।
স্বাধীনতার বিষয়টি যখন অধিকার প্রসঙ্গ আসে তখন আমাদের বিবেকে ধাক্কা দেয়। ধরুন কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি,সেখানে গিয়ে দেখলাম আমাদের থেকে ঘুষ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আমরা কিছুই বলতে পারছি না।
আজ আমরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা পর্যন্ত করতে পারছিনা। স্বাধীনভাবে মনের মতবাদ ব্যক্ত করতে পারছি না। চাইলেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করতে পারছিনা।
যদিও স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। তবে যদি স্বাধীনতাই না পাই তাহলে রক্ষা করবো কি।
'এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে'
– বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
স্বাধীনতার যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদদের প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।