হাতের তৈরি শিল্পকেই সাধারনত হস্তশিল্প বলে। নিজে এবং পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে সাধারন কিছু উপকরন দিয়ে অনায়াসে বানিয়ে ফেলা যায় এসব পণ্য । কতিপয় হস্তশিল্প পণ্য রয়েছে যেগুলির কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এসব বৈশিষ্ট্যের উৎস হচ্ছে একটি অঞ্চল বা দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বা কারুশিল্পীদের বিশেষ উৎপাদন কৌশল।
আপনারা জানেন আমি জামালপুরে এসেছি। জামালপুর অনেক উন্নত একটি জায়গা। জামালপুর হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানকার জামদানি শাড়ি অনেক প্রসিদ্ধ। এ শহরে তাই হস্তশিল্পের বিপণিবিতানও অনেক। শহরের আশিক মাহমুদ কলেজ সড়কে,পৌরসভার রাস্তায়, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর সাথে, ছোটখাটো গলি এমনকি প্রায় অনেক বাসায়ও নিজস্ব হস্তশিল্পের দোকান রয়েছে । পাশাপাশি জামালপুরের নকশী কাঁথা অনেক বিখ্যাত। যদিও নকশী কাঁথার দাম একটু বেশি।আমরা তো সাধারন কাঁথা ব্যবহার করি এই কাঁথা সেরকমই কিন্তু এর মধ্যে নকশা করা খুব সুন্দর ভাবে। আমরা খাতা তৈরি করে পুরাতন শাড়ি ,পুরাতন ওড়না দিয়ে। তবে এখানে মূলত বিক্রির উদ্দেশ্যে নকশি কাথা বানানো নতুন শাড়ি ,নতুন ওড়না দিয়ে । এগুলোর অনেক বিক্রয় কেন্দ্র আছে, যেখানে অনেক কম দামে পাওয়া যাবে জামালপুরের বিখ্যাত নকশি কাঁথা ও সূচিকর্মের বিভিন্ন সামগ্রী।
পাশাপাশি আরও অনেক কিছুর জন্যই জামালপুর বিখ্যাত। এখানে রয়েছে শাহজামাল (রা.) এর মাজার। যার মাধ্যমে জামালপুর নামকরণ এসেছে। জামালপুরের বুড়ির দোকানের রসমালাই, ছানার পোলাও বিখ্যাত। পাশাপাশি এই সুন্দর শহরে অনেক সুন্দর সুন্দর মসজিদ রয়েছে। মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার,জামালপুর,হবিগঞ্জ অর্থাৎ সিলেট এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা সমূহে প্রথম ইসলাম ধর্ম এসেছিল। তাই এসব অঞ্চলে মাজার এবং মসজিদ গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে হযরত শাহ জামাল (রহ.) মাজার,হযরত শাহ কামাল (রহ.) মাজার,মালঞ্চ মসজিদ,পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট রসপাল জামে মসজিদ,দয়াময়ী মন্দির,নরপাড়া দুর্গ,লাউচাপড়া পিকনিক স্পট,মুক্তিযুদ্ধে জামালপুর ১১ নং সেক্টর,মধুটিলা ইকোপার্ক,গান্ধী আশ্রম প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান। জামালপুরের রয়েছে মেডিকেল কলেজ এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়।এছাড়া এখানকার আশেক মাহমুদ কলেজ অনেক পুরাতন এবং ভালো।
জামালপুরের মত হস্তশিল্প আর কোথাও পাওয়া যায় না। বিশেষ করে আমার কুড়িগ্রাম জেলায় তো নাই বললেই চলে। এমনকি ঢাকা শহরেও খুঁজে পেতে একটু কষ্টকর হয়। কিন্তু জামালপুরে গলিতে গলিতে হস্তশিল্পের দোকান। এমনকি মূল্য বেশি নয়। এবং সবগুলোই অন্যরকম কারুকার্য পূর্ণ। বিশেষ করে জামালপুর জেলার মহিলারা স্বাবলম্বী এই হস্তশিল্পের কারণে।
আমার আম্মু পাঁচটি জামা কিনেছি। মূলত সবগুলো আম্মুর জন্য নয়, কুড়িগ্রামে আমাদের আত্মীয় স্বজনের জন্য নেয়া হয়েছে।কারণ জামালপুর ছাড়া এরকম হস্তশিল্প দেখা পাওয়া যায় না এবং দামও কিছুটা স্বাবলম্বী কম।
উপরের ছবিতে যে পাঁচটি জামা দেখতে পারছেন তার মধ্যে 2 টি ওয়ান পিস এবং তিনটি থ্রি পিস। ওয়ান পিস গুলোর দাম নিয়েছে ৫৫০ টাকা করে। এবং থ্রি পিস গুলোর দাম নিয়েছে ১১০০ টাকা করে। সাধারণত জামালপুর বাদে অন্য জেলার দোকানে এসব হস্তশিল্প পাওয়া যায় না ।জামার পিস ,ওড়না ,পায়জামা সবকিছুতেই হস্তশিল্প লক্ষনীয়। তবে ওরনাগুলো ছোট ছিল। এসব দোকানে বিভিন্ন রকমের ডিজাইনের জামা পাওয়া যাচ্ছিল। একটির সাথে আরেকটির মিল নেই। এসব জামা হস্ত শিল্পীরা নিজ হাতে করে। মূলত এখানে প্রতিটা গলিতে গলিতে হস্তশিল্পের দোকান লক্ষ্য করা যায়।এবং মহিলারা হাতে বানানো ,সুতির জামা কাপড় পরতে পছন্দ করেন। তার জন্য এর চাহিদা একটু বেশি।
তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম, এখানে যারা দোকানদার তারা কিছুটা কম আন্তরিক।আমি জানি না সবার কাছে কি মনে হয় কিনা কিন্তু আমার কাছে এরকমই মনে হয়েছে। আমি এর পূর্বে কুড়িগ্রাম জেলায় বাজার করেছি, সেখানে মানুষ পাওয়া যায় না কাস্টমারের কাছে বিক্রির জন্য তারা অনেক চেষ্টা করে। এমনকি আমি ঢাকা শহরেও বাজার করেছি সেখানে তো পাগল আসেন আসেন ,কি লাগবে, দোকান দেখে যান নানান ভাবে তারা বিক্রির চেষ্টা করে। কিন্তু জামালপুরের দোকানদাররা কিছুটা কম আগ্রহী ছিল জিনিসপত্র বিক্রির ক্ষেত্রে। মনে হয় চাহিদার কারণে।মূলত তারা ভালো করে আমাদের পণ্য গুলো খুলে দেখাচ্ছিলো না,এমনকি ডিজাইন নিয়ে একটু কথা বললেও তারা অন্য ভাবে উত্তর দিচ্ছিল। তবে যাই হোক , পণ্যগুলো আমরা কিছুটা গ্রহণযোগ্য মূল্যেই পেয়েছিলাম।
আজ এই ছিল জামালপুর হস্তশিল্প সম্পর্কে। আপনারা যদি জামালপুর আসেন অবশ্যই হস্তশিল্প একবার দেখবেন। এবং আপনারা চাইলে জামালপুর এসে হস্তশিল্পের তৈরি জামা কাপড় কিনে নিয়ে যেতে পারেন।