টিউশান মিডিয়া বর্তমানের ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম। বিশেষ করে যারা ঢাকা শহরে বসবাস করে তারা এদের সাথে সম্পৃক্ত। মূলত কিছু কিছু শিক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রী পড়াতে চাই কিন্তু পায় না, তখন তারা একজন মিডিয়া সংস্পর্শে আসে। সেই মিডিয়া প্রথম বেতনের 100% অথবা 70% অথবা 60% টাকা নিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে তাকে দিয়ে থাকে। টিউশন মিডিয়া মূলত এই কাজটাই করে থাকে। তাদের প্রধান কাজ কিছু কমিশনের মাধ্যমে অন্যকে ছাত্র খুঁজে দেওয়া। এতে করে একজন শিক্ষার্থী খুব সহজেই ছাত্র পেতে পারে।
আমাদের দেশে যারা ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে, তারা খুব সহজেই ছাত্র-ছাত্রী পেয়ে থাকে পড়াশোনা করানোর জন্য। আবার যাদের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন আছে তারাও এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী পেয়ে যায়। এমনকি অনেকে কোচিং এ ক্লাস নেয়। এবং সবশেষে আছে কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী, যারা ছাত্র-ছাত্রী খুঁজে পায় না পড়ানোর জন্য।
মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিচিত বড় ভাই যিনি অনেক প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন। সে ইতোমধ্যে পাঁচটি প্রাইভেট পড়ায়। এবার তার কাছে আরো একজন অভিভাবক বলে তার সন্তানকে পড়ানোর জন্য, তখন সে বলে আমার সময় নেই। তখন সেই অভিভাবক বলে আচ্ছা আপনার কি পরিচিত কেউ আছে যিনি প্রাইভেট পড়াবেন। তখনই সেই বড় ভাইটি কিছুটা কমিশনের আসায় তার প্রাইভেট টিকে অন্য একজনের কাছে দিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে উনি এভাবে আরো অনেক প্রাইভেট অফার পেয়ে থাকে, এরপর উনি সেগুলো অন্যদেরকে দিয়ে কিছুটা কমিশন পেয়ে থাকে। এটা হলো একজন সাধারণ বড়ভাইয়ের ক্ষেত্রে, কিন্তু অনেকেই এটাকে ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছে। তারা এটাকে বলে "টিউশন মিডিয়া"। আমরা ফেসবুকে, পত্রিকায় এরকম টিউশন মিডিয়ার বিজ্ঞাপন দেখে থাকি।
এখন আসি এর একটি ক্ষতিকর দিক । যারা এটিকে ব্যবসা হিসেবে ব্যবহার করে তারা কি করে জানেন? তারা প্রথমে শিক্ষার্থীর অভিভাবক কে বলে এই শিক্ষার্থীকে নতুন একজন শিক্ষক দিচ্ছি ,যিনি ২ মাসের জন্য পড়াবেন।কিন্তু যে ছেলেটি কমিশনের দিয়ে পড়াত যায়,সে জানে না যে তার স্থায়িত্ব দুই মাস। সে ক্ষেত্রে সে ৬০ দিন পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে মাত্র 30 দিনের। আবার অনেক সময় কিছুটা স্থায়িত্ব হয় এবং অনেকদিন পরায়। তবে অধিকাংশ সময় দেখা যায় এরা দুই তিন মাসের বেশি তাকে দিয়ে আর পড়ায় না।
আরেকটি ক্ষতিকর দিক হলো মিথ্যে পরিচয়। যখন টিউশন মিডিয়ার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে পড়াতে চাওয়া হয় ,তখন যে পড়াবে তার পরিচয় পুরোপুরি পরিবর্তন করে দেয়া হয়। তাকে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের নাম ,হলের নাম ,অধ্যায়নরত বিষয়ের নতুন নাম দেয়া হয়। এটা বলতে গেলে এক কথায় পুরোটাই মিথ্যা। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর জন্য এই প্রাইভেট টা অনেক। কারণ তার আর্থিক সংকট। কিংবা বাসা থেকে গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে টাকা ছাড়াই, তখন তার জন্য এই শহরে টিকে থাকা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। তখন সে বাধ্য হয়েই এই মিথ্যার আশ্রয় নেয় ,এই টিউশন মিডিয়ার আশ্রয় নেয়।
এবার আসি আমার একটি বাস্তব ঘটনায়। ঘটনাটি বেশিদিন নয় তিন মাস আগের অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের। তখন আমি ভাবছিলাম একটি নতুন প্রাইভেট শুরু করব। কারণ অন্যান্য মাসে প্রাইভেট পড়াতে পাওয়া যায় না, সকল অভিভাবক জানুয়ারি মাসেই তাদের সন্তানের জন্য শিক্ষক খোঁজে। এমতাবস্থায় আমার এক বন্ধু আমাকে টিউশন মিডিয়ার খবর।আর তখন আমার কাছে টাকাও ছিল যায় তার যার ফলে আমি তাকে টাকা দিয়ে আমার প্রাইভেট কি কনফার্ম করেছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম না আমাকে এত মিথ্যা কথা বলতে হবে। তারা আমাকে সবার প্রথমে বলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একজন শিক্ষার্থী। যেখানে আমার এইচএসসি এবং বর্তমানের অনার্সের বিষয় হলো মানবিক বিভাগের। তারপর তারা বলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের একজন শিক্ষার্থী। তারপর তারা আমাকে কয়েকজন শিক্ষকের নাম মুখস্ত করতে বলে। আরো নানান বিষয়। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই। সত্যি বলতে আমি মিথ্যা কথা বলি না ,তবে মাঝে মাঝে বলে ফেলি। তারপর আমি সেই টিউশন খোজা টি বাদ দিয়ে দেয়।বাদ দিয়েই বলতে আমার বন্ধুকে দিয়ে দেই এবং তাকে বলি তুই আমাকে দুই তিন মাস পরে হলেও টাকাটা ফেরত দিস। আজ ৪ মাস হয়ে গেল ,এখনও আমার টাকা ফেরত পায়নি। মূলত এ মনে হয় পুরোটা পাবো না, এবং কবে পাব তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমনকি আমি যেদিন জানুয়ারি মাসে টিউশন মিডিয়াকে বলেছিলাম ,আপনারা 1000 টাকা রেখে আমাকে বাকি টাকাটা দিয়ে দিন ,তাও তারা দেয়নি।
এই ছিল আমার টিউশন মিডিয়ার অভিজ্ঞতা। মূল প্রসঙ্গ হল এই মিডিয়াগুলো অনেক সময় দুই তিন মাসের প্রাইভেট দিয়ে থাকে, যার ফলে একজন ছাত্রের অনেক ক্ষতি হয়। আশা করি আপনারা আমার কথাটি বুঝতে পেরেছেন। বর্তমানে রমজান মাস চলে,সিয়াম সাধনার মাস তাই ব্লগ লেখার সময় দিতে পারিনি। ইনশাআল্লাহ প্রতিদিন দেয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ সবাইকে।