"নদীর জলে বেষ্টিত সে, সবুজে ভরপুর,
লোকগুলো তার মিষ্টি মধুর, গ্রাম সে হাজীপুর। "
১৯৯২ সালের ১০ই আগস্ট,
বিকেলবেলা
হাজীপুর গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকায় নবী বেপারীর বাড়িতে একটা কান্নার আওয়াজে সকলের মাঝে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেলো। আর সেই কান্নাটা ছিলো আমার জন্মকালীন কান্না।
নানুবাড়ী হওয়া সত্বেও জন্মসূত্রে আমি এই পাড়ার নাগরিকত্ব পেয়ে বসলাম। আর সেই নাগরিকত্ব এতটাই স্থায়ী হলো যে, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র ও এই এলাকাতেই করে নিলাম।
আমার এই এলাকার নাম উত্তরপাড়া, ঢাকা জেলার ধামরাই থানার হাজীপুর গ্রামে এই পাড়ার অবস্থান।
আমার গ্রামটা বর্ষাকালে পানিতে আর শীতকালে হলুদ সরিষাফুলে বেষ্টিত হয়ে থাকে।
নদীতে সূর্যাস্ত (আমার গ্রামে)
হাজীপুর গ্রামে আমার এলাকাটা একটা ছোট্ট অংশ জুড়ে রয়েছে। এখানে বিশেষত একটা মসজিদ ছাড়া তেমন কিছুই নেই। তবে এখানে একঝাঁক মানুষ আছে, আর তাদের গায়ে আছে মাটির সুগন্ধ। তবে ওখানে শিক্ষার হার ঈর্ষনীয়। এখানকার ৮০% মানুষ তাদের উচ্চ মাধ্যমিক সমাপ্ত করেছেন।
এখানে মানুষজন এর মাঝে গ্রামের স্বাভাবিক দুইটা রূপই দেখা যায়, এরা যেমন মিলেমিশে থাকে, তেমনি মাঝে মাঝে এরা নিজেদের মাঝে ঝগড়াতেও লিপ্ত হয়ে থাকে। আর সেই ঝগড়া হয় পুরো এলাকায় কম্পন ছড়িয়ে।
নদীবেষ্টিত হওয়ায় আমরা নদীতে ভেসে বেড়াতে পছন্দ করি। সেটা নৌকায় অথবা সাঁতার কেটে।
গ্রামের পাশের নদী
শীতকালে আমাদের পাড়া হলুদ বরণ ধারণ করে। সরিষাফুলের হলুদে পুরো এলাকা হলুদ হয়ে যায়।
আমাদের গ্রামে পাড়াভিত্তিক একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালু আছে, যার নাম "হাজীপুর প্রিমিয়ার লীগ।" লীগের সর্বশেষ আসর হয়েছিলো ২০১৪ সালে। যার চ্যাম্পিয়ন ছিলাম আমরা *উত্তর পাড়া" এবং টীমের নাম ছিলো "উড়ন্ত উত্তর"। সেই টুর্নামেন্টে উত্তরপাড়ার উত্তরগুলো সত্যিই উড়তেছিলো। আমরা তাতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ছিলাম।
ট্রফি হাতে আমরা
সবকিছুর পরে হতাশার কথা হলো, আমি এখন আর এই পাড়াতে থাকি না।
এখন আমার স্থায়ী আবাস নানুবাড়ী থেকে দাদুবাড়ি হয়েছে। আর চাকুরিসূত্রে রয়েছি আরো দূরের এক শহরে। বছরে দুএকবার যাওয়া হয়, আর সর্বদা অনুভব করি নাড়ীর টান।
ধন্যবাদ @bdcommunity কে এমন একটা প্রতিযোগিতার আয়োজনের জন্য।