রেলস্টেশন হল গণমানুষের মিলনমেলা। সব শ্রেনীর মানুষের দেখা পাওয়া যায় এখানে। উচু কিংবা নিচু, ধনী কিংবা দরিদ্র, সবাই ট্রেইনের জন্য অপেক্ষমান৷ স্টেশনে ট্রেইন ঢুকামাত্রই পুরো স্টেশনের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। মুহুর্তের মাঝেই শান্ত স্টেশনটা হয়ে উঠে অশান্ত। মানুষের ছুটাছুটি আর হুটুপুটিতে অন্যরকম এক চিত্র দেখা যায়। কেউ ট্রেইন থাকে নামে আবার কেউবা উঠে। সবকিছু মিলিয়ে অসাধারন এক চিত্র।
রেলস্টেশনে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ইউনিক, তা হল ভাসমান মানুষদের চিত্র। এদের নিজস্ব কোনো ঘর নেই, বাড়ি নেই৷ এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়ায় পরিবার নিয়ে। এক স্টেশনে অবশ্য বেশিদিন থাকে না। এইটাই ওদের জীবন। অনেকটা বেদে দের মতো। শুধু পার্থক্য হল বেদে রা নৌকায় করে নদীতে নদীতে ঘুরে বেড়ায়, আর ওরা রেলস্টেশন থেকে রেলস্টেশনে।
একসময় কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে এসমস্ত ছিন্নমূল মানুষদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে স্টেশনের উন্নয়নপ্রকল্পের পর এদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ তবুও এখনো বেশ কিছু পরিবারকে দেখা যাচ্ছে, যারা এই রেলস্টেশনেই থেকে পড়ে বেঁচে আছে।
এসমস্ত ছিন্নমূল মানুষদের সবচেয়ে বেশি দেখেছিলাম নারায়নগঞ্জ রেলস্টেশনে। অন্য যেকোনো স্টেশন থেকে নারায়নগঞ্জের রেলস্টেশনটা আমার কাছে একটু অন্যরকম মনে হয়েছে। এই স্টেশনটা একটু বেশিই নোংরা। পাশাপাশি ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষদের আধিক্যের কারণে কেমন যেন গিঞ্জিমার্কা একটা পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
সেই তুলনায় কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনটা অনেক সুন্দর। গত বছর প্লার্টফর্মটা সংস্কার করা হয়েছে। আয়তন বাড়ানো হয়েছে। প্লার্টফর্মের ভেতর গড়ে উঠা ছোট ছোট দোকানপাটগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফলে খোলামেলা এই রেলস্টেশনটাতে আসলেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। আগামীতে সম্ভবত আরো কিছু উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। তখন এর সৌন্দর্য আরো কয়েক গুন বেড়ে যাবে৷
যায় হোক, আজ গ্রামে যাবার সময় কুমিল্লা রেল স্টেশনে বসে বসে ট্রেইনে অপেক্ষা করার সময় এইসব হাবিজাবি ভাবনা ভাবছিলাম। কোনো এক কারণে ট্রেইনটা কুমিল্লা পৌছতে লেইট করেছিল। এই সময়টার পুরোটা জুড়েই প্লার্টফর্মে বসে ছিলাম। ইদানিং সিএনজি ছেড়ে ট্রেইনের দিকেই বেশি ঝুঁকছি আমি। সিএনজিতে করে গেলে ২ ঘন্টা সময় লাগে, আর ট্রেইনে ৪৫ মিনিট। ক্রসিং পড়লে অবশ্য ভিন্ন কথা৷
পুকুর পাড়ের এই ছবিটা দুপুরের দিকে তোলা৷ বাড়ি থেকে বের হয়ে স্টেশনের দিকে যখন যাচ্ছিলাম, তখন তুলেছি। পুকুরটা এবছর নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ পুরো পুকুর জুড়ে শ্যাওলা আর আগাছায় ভরপুর৷ মাঝখানে অবশ্য পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ কিন্তু যেই লাউ, সেই কধু৷ ২ দিন পর আবারও শ্যাওলাতে ভরে গিয়েছে পুরো পুকুর৷ এজন্য এরপর আর পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হয় নি। কিছুদিন পরেই তো আবার শীতকাল চলে আসবে৷ তখন পুকুরের পানি এমনিতেই শুকিয়ে যাবে। তখন নাহয় পরিষ্কার করা যাবে।
কাঁঠবিড়ালি দেখা হয় না বহুদিন৷ আজ বাড়ি থেকে বের হবার সময় তাও চোখে পড়ে গেল। এমন না যে আমাদের এলাকায় কাঠবিড়ালি নেই। বাড়ির সামনের নারকেল গাছের নারকেলগুলো সব কাঁঠবিড়ালিরা খেয়েই নষ্ট করে ফেলছে। কিন্তু তেমন একটা চোখে পড়ে নি। অথবা পড়লেও খেয়াল করা হয় নি৷ কিন্তু আজ হুট করে আকাশের দিকে চোখ যেতেই এই ছোট্ট কাঁঠবিড়ালিটা নজরে পড়ে গেল। আর সেই সুযোগে একটা ছবিও তুলে ফেললাম।
আসলে চলতি পথে আমাদের চোখের সামনে কত কিছুই না থাকে। কিন্তু সেগুলোর প্রতি আমরা তেমন একটা মনযোগ দিই না। যদি দিতাম, তাহলে বুঝতাম, আমাদের প্রকৃতিটা কত সুন্দর। একটু ভাল করে খেয়াল করলে ইকুসিস্টেম সম্পর্কেও সুন্দর একটা ধারনা পাওয়া যেত। আমরা সবাই সবার উপর নির্ভরশীল। সবকিছু মিলিয়েই আমাদের এই পৃথিবী। সবাই মিলে সুন্দর করে একসাথে থাকলেই সুন্দর করে বেঁচে থাকতে পারব আমরা। তা না হলে সময়ের সাথে সাথে কালের বিবর্তনে একসময় অন্ধকারের অতল গহবরে হারিয়ে যাবো।