তামিল একটা মুভি আছে, নাম বিক্রম ভেদা। এইটা আমার পছন্দের একটা মুভি। এখানে নায়কের নাম বিক্রম আর ভিলেনের নাম ভেদা। মারকাট ভারতীয় মুভিতে যেমনটা থাকে, এখানেও ঠিক তেমনটাই রয়েছে। নায়ক বিক্রম একজন সৎ পুলিশ অফিসার। কোনো কিছুকেই পরোয়া করে না সে। নিজের দুর্দষ কলিগদের নিয়ে একের পর এক ভিলেন ভেদার চ্যালাদের এনকাউন্টার করতে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হয় জানেন? শেষ মুহুর্তে দেখা যায় যে তারা এতদিন সবাই মিলে যেসব এনাকাউন্টার করেছে, আদতে সেগুলো কোনো এনকাউন্টারই ছিল না। বরং ভেদার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কন্ট্রাকড কিলিং করে আসছে এতদিন।
আমাদের দেশে লাস্ট অনেক বছর ধরে ক্রসফায়ারের কথা শুনা যাচ্ছে খুব। ক্রসফায়ার মানে সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের মুখোমুখী সংঘর্ষ। তবে বিক্রম ভেদার এনকাউন্টার ও আমাদের দেশের ক্রসফায়ারের মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নাই। গত কয়েক বছরে আমারের দেশে প্রায় ৩ হাজার ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। সংবিধান অনুসারে এসবগুলোই বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড। যাদের হাতে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব, তারাই যদি এধরনের বিচারহহির্ভূত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে আর কি বলার আছে?
আদালত কর্তৃক অপরাধী প্রমাণিত হবার আগ পর্যন্ত কাউকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা যায় না। অথচ আমাদের দেশে বিচার তো দূরের কথা, জাস্ট সন্দেহের বশেই পুলিশ যখন যাকে ইচ্ছে খুন করে ফেলছে। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এই যে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ পরোক্ষভাবে ক্রসফায়ারকে সমর্থন করে। যদিও এই সমর্থনের পেছনে আদালত থেকে সঠিক বিচার না পাওয়ার ইতিহাসগুলো প্রভাব ফেলেছে। তবে একটা অপরাধের ক্ষোভ থেকে আরেকটা অপরাধকে সমর্থন করা কোনো ভালো কাজ না।
কিছুদিন আগে অবসর প্রাপ্ত মেজর সিনহাকে খুন করার অপরাধে গ্রেফতার হওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের আমলনামা ধীরে ধীরে প্রকাশ হচ্ছে। মাত্র কয়েক বছরেই ১৫৪ টা ক্রসফায়ার করা হয়েছে ওসি প্রদীপের আন্ডারে। যাদেরকে ক্রসফায়ার করা হয়েছে, তাদের অপরাধ কী? তারা খুব দুর্ধর্ষ অপরাধী? মোটেও না। ইয়াবা ব্যাবসায়ী। ক্রসফায়ারের পর মৃত লাশের পাশে ২০-২৫ টা ইয়াবা ছড়িয়ে দিয়ে এরকম একটি হত্যাকান্ডকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করা হয়। এবং এসব দেখে আমরা আন্ততুষ্টিতে ভুগী।
পুলিশ চাইলেই কিন্তু অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু তা না করে কেন ক্রসফায়ার করে? লেখার শুরুতে বিক্রম ভেদার গল্পটা আরেকবার পড়ে দেখেন। কী? এভার কিছুটা বুঝতে সহজ হচ্ছে?
ক্রসফায়ারের পরিসংখানের দিকে তাকালে ভয় পেতে হয়। এতে শুধু সন্ত্রাসীরাই যে মারা পড়বে, এমনটা নয় কিন্তু। মেজর সিনহার হত্যাকান্ড আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে এমন অবস্থায় আমি কিংবা আপনিও পড়তে পারেন। সময় থাকবে আসুন, এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিই। কোনো সভ্য মানুষের দেশে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টারের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চলতে পারে না। এবার নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিই, আমরা সভ্য তো?