ছেলেরা বড্ড সাদাসিদে, তবুও মাঝে মাঝে সমাজের কিছু জিনিসের প্রতি তার ভীষণ রাগ হয়, একবারে রাগ না হলে সে আবার মানুষ হয় কিভাবে? আবেগ আছে বলেই ত আমরা মানুষ তাই না? সবার সব জিনিস আমাদের ভালো নাই লাগতে পারে, আমাদের আশেপাশের সবাইকে আমাদের ভালো নাই লাগতে পারে, মাঝে মাঝে কারো কাজের জন্য ভীষণ রাগও হতে পারে, আর তাতে দোষের কিছু নেই। বরং এগুলো স্বাভাবিকই। সবাইকে যেমন আপনার ভালো না লাগা স্বাভাবিক ঠিক তেমনি কারো চোখে আমি ভালো নাও হতে পারেন এটাও এমনই স্বাভাবিক বিষয়। এটা আপনি মেনে নেন, আর নাই নেন এটাই বাস্তব।
ছেলেটাকে তার বাবা মা প্রায় অবহেলা করতো, বাসায় সারাদিন শুয়ে বসে কাটিয়ে দিত করার কিছু থাকত না ত তাই তার এ ধরনের জীবনযাপন তারা তেমন একটা পছন্দ করত না। ছেলেটা স্বভাবে খুবই চুপচাপ এবং শান্তশিষ্ট। এবার গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর চাকুরির সন্ধানে ব্যস্ত। মধ্যবিত্ত জীবন, তার ষাটোর্ধ্ব বাবাওই তাদের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। তার আশা সে যদি কোনোরকমে একটা চাকরি পেয়ে যায়, তার বাবাকে আর কাজ করতে দিবে না। কিন্তু একের পর এক চাকরির আবেদন ত করেই যাচ্ছে কিন্তু চাকরি মেলার ত কোনো নাম গন্ধই নেই। এমন না যে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব কিংবা তার চাকরি পরিক্ষা ভালো হতো না। এপর্যন্ত যত পরিক্ষায় সে অংশগ্রহণ করেছে মোটামোটি সব পরিক্ষাতেই সে ভালো ভাবেই দিয়েছিলো। এমনকি সব কিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও ভাইভার (মৌখিক পরিক্ষা) প্রশ্নে সে বাদ পড়ে যেতো। প্রশ্ন না পারার কারনে নয়, অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় তা দিতে অসম্মতি জানানোর কারনে তার বেশিরভাগ চাকরিই ভাইভা বোর্ডে গিয়ে আর হয় না।
শেষমেশ তার বাবা বাধ্য হয়ে, তার জমানো টাকা থেকে ছেলেকে বলে, " এর পরের বার তকে তার টাকার জন্য ভাইভা বোর্ড থেকে চাকরি না পেয়ে বের হয়ে আসতে হবে না। " ছেলে বলল, " না, বাবা। আমি টাকা দিয়ে চাকরি পেতে চাই না, আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পেতে চাই। সেজন্য আনাকে যতই কষ্ট করতে হোক না কেন! যে চাকরিই পাই না কেন আমি তা করব, কিন্তু টাকা দিয়ে চাকরি আমি করব না।"
এদিকে চাকরি ত আর মিলছেই না, চাকরি যেনো আমাবস্যা চাঁদের ন্যায় হয়ে গেলো। এদিকে ছেলে বাপের উপর যেনো বোঝা হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। একটা মেয়ে বাপের উপর বোঝা হলে সেটা মানা যায়, সমাজও সেটা মেনে নেয় কারন সেখানে তেমন বলার কিছু থাকে না। কিন্তু একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে যখন তার পরিবারের হাল ধরতে না পেরে, বাপের উপর বসে খায় এর থেকে বড় বোঝা আর কিছু হতে পারে না।
এদিকে তার বাপ-মা তার উপর বিরক্ত হয়ে প্রায়ই তাকে বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে কিন্তু কখনো সে আর যায় না। তার বাবা-মাকে সেও বলে চলে, " চলে যাবো, চলে যাবো। তখন তোমরা কাঁদবে। কিন্তু কখনই আর যায় না। " তারা মনে করতে থাকে ছেলে আর যাবে না শুধু শুধুই তাদের ভয় দেখায় চলে যাবে বলে। একদিন তার বাবা-মা তার সাথে অনেক চিৎকার চেচামেচি করে এবং বের হয়ে যেতে বলে বাড়ি থেকে। যখন তার বাবা-মা বের হয়ে যায় তখন এক ফাঁকে সত্যিই সত্যিই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বাড়িতে আর ফিরবে না যতদিন পর্যন্ত নতুন একটা চাকরি না মিলে ততদিন।
বাইরে বের হয়ে কিভাবে কি করবে, প্রথমে ত আগে একটা মেস ঠিক করে তাতে উঠতে হবে নাইতো উপায় নেই। অবশেষে সে আর কাছের কয়েকজন বন্ধুদেরকে তার সমস্যা বলে, একদিনের মধ্যে মেসে একটা সিট ম্যানেজ করপ দেয়ার কথা বলে। কিন্তু তারা তআর কথা পাশ কাটয়ে কল কেটে দেয়। বিপদে কে আপন সে তা বুঝতে পারল। বাসায় ত এত সহজে ফেরা যাবে না, তাই একরাতে স্টেশনে বসে কাটিয়ে দিলো। কিন্তু মেসের কোনো খবর পেল না। নিজে নিজে খুজতে খুজতেই এক্কটা সিট মিলে এবং তাতে কিছু দিন থাকার পর তার একটা চাকরি হয়ে যায়। আর বাড়ি ফিরে গেলে তার মা-বাবা ছেলেকে ফিরে পেয়ে পাগলের মতো হয়ে গেলো। এ ফাকে দিয়ে সে বিপদে মুখোশধারী মানুষদের আসল চেহারা চিনিতে পেলো।