মানুষ ছাড়া নাকি মানুষ চলতে পারে না? অনেকেই বলবে যে না, মানুষ ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। আমার মাও আমার সাথে প্রায়ই একথা বলে থাকে। উনার মতে, মানুষ সামাজিক জীব হয়ে সমাজে চলতে গেলে একে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন, কখনো নিসঙ্গতা দূর করার জন্য কারো একজনের সঙ্গতার ভীষণ প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হয় একজনকে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয় বিপদে সঠিক পথে খুঁজে পাওয়ার জন্য, সকাল পেশার মানুষের ভীড়ে আমাদের প্রয়োজন অন্য শ্রেণিপেশার মানুষদের, কারন আমরা কখনো একই সাথে একই সময় সব ধরণের কাজে পারদর্শী হতে পারি না আর এটা প্রায় অসম্ভব।
তাই বলে কি এ পৃথিবীতে কেউ একা বাস করছে না? একটি বিশ্বস্ত হাত হারিয়ে ফেলার কারনে একজন বিধবা মহিলা কি একা তার পুরোটি জীবন পার করে দিচ্ছে না? আপনজনের থেকে কষ্ট পেয়ে কি, মানুষ দূরে গিয়ে একা বাস করছে না? কোনো একটি মেয়েকে গভীর ভালোবেসে তার প্রাক্তন তাকে বিয়ে করতে না পেয়ে কি সারা জীবন কুমার হয়ে একা তার পুরোটি জীবন কাঁটিয়ে দিচ্ছে না? জীবন চলছে, থেমে নেই কোনো না কোনো ভাবে একজনকে তার জীবনে চালিয়ে নিতে হয় তার মতো করে নয়তো বা জীবনের মতো করে।
আমি এই একই জিনিস, মানুষ যে একা চলতে পারে না। একটু ভিন্নভাবে দেখি, পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা একা চলতে পারে, কিছু মানুষ আছে যারা একা চলতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যদিও এ বৈশিষ্ট্যের মানুষ সংখ্যা খুবই কম এ পৃথিবী এমনকি আপনি যদি আপনার সমাজে এধরণের মানুষ খুঁজতে বের হন তাহলে এক কিংবা দুইজনের বেশি পাবেন কিনা আমার তাতে সন্দেহ।
কিছু মানুষ আছে আপনার আশেপাশে যারা একটু ব্যতিক্রম, তাদের চিন্তারধরণও আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো এতো সাধারণ না৷ একটু ব্যতিক্রম, ব্যতিক্রমধর্মীভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করে। তারা তাদের চিন্তায় নিজের কোনো জিনিসে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করে, আর আশেপাশের মানুষেরা কি ভাবে বা তার কাজকে নিয়ে কি ভাববে তা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায় না। এজন্যই তাদের ক্রিয়াকলাপকে মানুষ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং তাদেরকে মানুষ মনে রাখে।
এটা ইতিবাচক না নেতিবাচক, তাতে আমি যাচ্ছি না, তবে যে কাজ করে আপনি আনন্দ পান, সে কাজের জন্য যদি আপনার আশেপাশের মানুষ আপনাকে মনে রাখে এবং আপনি আপনার সে কাজের মাধ্যমে তাদের মনে জায়গা করে নিতে পারেন এর থেকে বড় অর্জন আর অন্য কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না।
কিছু মানুষ আছে কোনো, কোনো বিপদে পড়লে তার সামনে যাকে পাবে তার সাথেই তার সব দুঃখের কারনগুলো এক এক করে বলতে থাকে, যদিও সে জানে না সে এ ব্যাপারে পুরোপুরি অবহিত হয় যে, যার সাথে সে তার দুঃখের কথাগুলো বলছে সে তার বিশ্বাসের যোগ্য কিনা না। আর বেশিরভাগ মানুষ বিপদে এ ধরনের ভুল প্রায়ই করে থাকে। আর এভুল করার ক্ষণিক পরই তার সেন্স ফিরে আসে এবং সে বুঝতে পারে সে তার দুঃখের কথাগুলো ভুল মানুষের সাথে বলে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে। কারন সে যদি তার বিশ্বাসের অবমূল্যায়ন করে তখন কি হয়। আর এভয়ে ভয়ে সে দিন কাটাতে থাকে।
উদাহরণস্বরুপ অন্য মানুষের উদাহরণ ত আর কম দিলাম না, এবার আমার উদাহরণই দেওয়া যাক। যখনই অবসর থাকি হাতে করার মতো তেমন কাজ থাকে না, তখন আমি নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভীষণ পছন্দ করি। আমার ভেতরকার সে আমিকে এক এক করে প্রশ্ন করে তার ভেতরকার খুঁতগুলো খুঁজে বের করে, আমারমতো করে তার সমাধান দিয়ে আমারই আরও ভাল সংস্করণ হবার চেষ্টা করি। আর এটা করতে নিয়ে একটি প্রশ্ন প্রায়ই নিজেকে করে থাকি, তা হলো আমি ইন্ট্রোভার্ট নাকি এক্সট্রোভার্ট। এর যথাযথ সঠিক উত্তর এক কথায় দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে আমি ইন্ট্রোভার্ট বলে নিজেকে দাবি করলেও আমি পুরোপুরি ইন্ট্রোভার্ট না, এটা ঠিক যে আমি সহজেই মানুষের সাথে মিশে যেতে পারি না বা মিশতে তেমন একটা সাচ্ছন্দ্যবোধ করি না যখন পর্যন্ত না সে মানুষের একটি গুণ আমাকে অভিভূত করবে কিংবা আমার সাথে মিলবে। যদি একবার তা মিলে যায়, তাহলে আমার সাথে সে মানুষটি ভীষণ ভালো সম্পর্কে সৃষ্টি হয় তা আমি আমার শৈশব থেকেই খেয়াল করে আসছি। আর আমি মানুষকে সহজে বিশ্বাস করতে ভয় পাই দেখেই এক্সট্রোভার্ট স্বভাবের এখন অব্দি হতে পারলাম না আর হয়তো বা এক্সট্রোভার্ট হওয়া আমায় দিয়ে কখনো সম্ভবও হবে না।