আমি বিডি কমিউনিটির জন্য একটি গল্প লিখছি। আশা করি সবাই পড়বেন,
হরির সত্য

হরি তার বাবা আর মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান। তবে এক পুত্র বলে হরির বাবা নিকিলেশ বাবুর যন্ত্রণা অনেক বেশিই।
সন্তান হয়নি বলে এই জ্বালা নয়!
নিকিলেশ বাবুর সমস্যা হচ্ছে তার ছেলে হরি যেখানে সেখানেই তাকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। ছোট বেলায় নিকিলেশ বাবু চেয়েছিলো তার সন্তান যেনো সদা সত্য বলেন।তবে সেই চাওয়া যে এখন গলার কাটা হয়ে যাবে তা কি আর সেই বেচারা জানতো!!
একদিনের ঘটনাই না হয় বলি,
একদিন নিকিলেশ বাবু হরিকে নিয়ে এক বন্ধুর পার্টিতে গেছেন। তখন হরির বয়স সবে বারো কিংবা তেরো ছুঁই ছুঁই। তো যথারীতি তারা সেই পার্টিতে সময় মতো উপস্থিত হলেন।পার্টি ভালো রকমের ই জমে উঠেছে।
পার্টিতে আরো অনেক গেস্ট ই আছে। তবে একটা গেস্ট ছিলো একটু নিম্ন-মধ্যবিত্ত ধরণের। তা তাদের পোশাক আশাক দেখেই ঠাহর করা যায়। পার্টি হচ্ছে নিকিলেশ বাবুর বন্ধু অজিতের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে। কথায় কথায় জানা গেলো, এক কোণায় সামান্য বিব্রত বিব্রত চেহারা নিয়ে বসে থাকা পরিবারটি হলো অজিতের বোন, বোনের জামাই আর তাদের দুই সন্তান। কাহিনী এসব নয়। কাহিনী হলো,
সবাইকেই মজার মজার নাস্তা দেওয়া হচ্ছে। বেশ জম্মেশ খানাপিনা, ভাজাপোড়া, মটন সবটাতেই ঘর ম ম করছে। তবে অজিতের বোনের টেবিলে দুটো সবজি ভাজা, কিছু বিস্কুট আর কোল্ড ড্রিংক্স।তারা তা ই খাচ্ছে মাথা নিচু করে।
অজিতদের বোনের টেবিলের পাশের টেবিল নিকিলেশ বাবু আর হরির। তাদের টেবিলে আবার হরেক পদের নাস্তা।
হঠাৎ অজিতের বউ রাখী অজিতের বোন পারুলের টেবিলের কাছে এসে বললো,
" ইশশশ,দেখেছ কান্ডখানা!তোমাদের তো কিছুই দেয়নি দেখছি! আমি বললাম স্পেশালি তোমাদের টেবিলটায় যেনো সব কিছু থাকে। দাড়াও আমি দেখি কি করা যায়। "
এই কথা বলতেই হরি উচ্চস্বরে কথা বলে উঠলো!
হরি বললো, " আন্টি আপনি মিথ্যে বলছেন কেনো?আপনিই ওয়েটার দাদাকে বললেন ওদের টেবিলে যেনো ভালো কিছু না দেওয়া হয়!
আর বললেন, " ওরা তো গরীব।ওসব খেতে টেতে পারবেনা। " আমি শুনেছি বাথ্রুমে যাওয়ার সময়। "
হরি এই কথা বলার সাথে সাথেই আশেপাশে পিন পতন নিরবতা নেমে এলো। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। তবে অজিতের বোন পারুলের মুখটা শুধু লোহার মতো শক্ত হয়ে আছে। আর পারুলের স্বামী মুখটা নিচের দিকে করে হাতের সাথে হাত ঘষতে ঘষতে আনমনা হয়ে আছে।
দু মিনিট পরেই রাখী একবার অজিতের দিকে আগুন চোখে তাকালো আর হম্বিতম্বি করে পায়ের উঁচু হিলে ঠক ঠক করে শব্দ করতে করতে নিজের রুমে গিয়ে স্বজোরে কপাট লাগিয়ে দিলো।
পার্টি আপাতত এখানেই শেষ হলো বোধহয়। কারণ নিকিলেশ বাবু হরির হাত ধরে সোজা বের হয়ে একটা টোটো ধরলেন। আর এরপর বাসায়।
বাসায় ঢুকেই নিকিলেস বাবু স্ত্রীকে ডেকে হল্লা বাধিঁয়ে দিলো আর বারবার কপাল চাপড়ে বলতে লাগলো,
" হে ভগবান,কেনো এমন একটা ছেলে আমার তুমি দিলে!কি পাপ করেছি আমি। কিসের সাজা দিচ্ছ আমার?"
পরক্ষণেই হরি বলে উঠলো,
" বাবা আমি তো শুধু সত্যিটাই বললাম!সত্যি বলা কি খারাপ?"
এর উত্তর নিকিলেশ বাবু দিতে পারেনি।
হয়তো তার কাছে জবাব নেই।
এমন ঘটনা হরির জীবনে রোজ হচ্ছে।
হরি শুধু একটা ব্যাপারই বুঝতে পারে না যে " সত্যি সবসময় বলতে নেই। এই পৃথিবীর সবটা যে সত্যিতে চলে না!"
লেখনিঃ শাহাদাত