ঢাকা শহরের ফুটপাতে আপনি কি কখনো আঁখের রস পান করেছেন? যদি করে থাকেন তাহলে আপনার নিশ্চয়ই অভিজ্ঞতা আছে, আঁখের রস বিক্রতা কিভাবে হাতের সাহায্যে বা যন্ত্রের মাধ্যমে পুঁলি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আঁখ থেকে রস বের করেন। এখানে সবচেয়ে মজার এবং শিক্ষনীয় বিষয়টা হলো, বিক্রতে আঁখ থেকে শেষ বিন্দু রস নিষ্কাষন না করা অবধি হাল ছাড়েন না। যদিও বা শেষ বিন্দুটুকু পর্যন্ত নিষ্কাষিত করতে তার অধিক শক্তির ব্যবহার করতে হয়। বিক্রেতার এই চেষ্টা দেখে মনে হয়, শেষ ফোঁটা আঁখের রসটা রের না করলে তার হয়তোবা লোকসান হয়ে যাবে। বাস্তবে কিন্তু তা নয়, রস বিক্রতা তার দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করেন মাত্র।
এখান থেকে আমরা আমাদের জীবনের জন্য অনেকগুলো শিক্ষা নিতে পারি। প্রথমত, কাজের ফলাফল ছোট কিংবা বড় যাই হোক না কেন, ফলাফলের দিকে আলোকপাত না করে আমাদের নিজেদের কাজগুলোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। যাতে পরবর্তীতে সেই কাজের জন্য অন্যকেউ আঙ্গুল তুলতে না পারে। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি কাজের জন্য আমাদেরকে সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরীক্ষা দেয়া উচিত। শেষ এবং আমার গল্পের আলোচ্যে বিষযের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে; আমাদের আত্ম-উপল্বদ্ধিকে সমৃদ্ধ করার জন্য, আমাদের নিজেদেরকে যথা সম্ভব নিংড়ানো। নিজকে নিংড়িয়ে নিজের ভিতরের সত্ত্বাকে যথাসম্ভব তরান্বিত করা। তাহলেই হয়তোবা সমাজের চোখে না হোক নিজের চোখে নিজেকে মানুষ বলে দাবি করতে পারব আমরা।
খাতা কলম নিয়ে পাঠিগনিতের অংক কষার মতোই যদি হতো জীবনের অংক কষা তাহলে আমরা সবাই হয়তো নিজ নিজ জীবনের অংকের ফলাফল বের করে ফেলতাম। সবাই হয়তোবা আত্ম-উপল্বদ্ধিতে বলিয়ান হতাম। এই আত্ম-উপল্বদ্ধি বিষয়টা কিছুটা গোলমেলে। আমরা মাঝে মাঝেই আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোকে আত্ম-উপল্বদ্ধির সাথে জগাখিচুরি পাকিয়ে বসি। আমাদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোকেই আমরা আত্ম-উপল্বদ্ধি ভেবে বসি।
তাহলে আমাদের আত্ম-উপল্বদ্ধি কোন বিষয়গুলো হতে পারে? আমি আমার দৃষ্টকোন থেকে আত্ম-উপল্বদ্ধি বলতে যা বুঝি তা হচ্ছে, বাস্তবতার সাথে তালমিলিয়ে জীবনের গতিহীন পথে নিজেকে যখন গা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ করে কোন একদিন, নিজের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে যখন নিজের বিবেকের কাঠগড়ায় হাজির করিয়ে, উকিল সেজে নিজের মধ্যে যখন সঠিক দায়িত্ববোধের চিন্তা উদয় হয় এবং তার আলোকে নিজের ভিতরে লুকিয়া থাকা প্রত্যয়ের উজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ ঘটে, সেটাই আমাদের প্রকৃত আত্ম-উপল্বদ্ধি। আমার সাথে আপনার দৃষ্টকোনের পার্থক্য হতেই পারে।
বিষয়টা নিয়ে চলুন একটু আলোচনা করা যাক। মনে করলাম আজকে পড়ন্ত বিকালে আপনি যখন আপনার ঘরের বারান্দার চেয়ারটিতে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন, তখন হঠাৎ করেই সামনের বাসার ছাদে এক ললনাকে দেখে, নিজের মনের ভিতর একটি প্রশ্নের উদয় হইলো, আমি ব্যাচেলর, আমার বয়স বর্তমানে ২৮ বৎসর। বিয়ে করার বয়স আরো চার বছর আগেই পেড়িয়ে গেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে ফেলা উচিত। জীবনে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছি, এখন অবধি ভবিষ্যতকে নিয়ে ভাবার আমার সময় হয়নি এমনকি ভবিষ্যতের জন্য কোন সঞ্চয় ও করা হয় নাই।
যে কোন ভাল মেয়ের পরিবার তাদের জামাইয়ের সুরক্ষিত ভবিষ্যতকে প্রাধান্য দেয় খুব বেশি। তাই সঞ্চল বর্তমানের উপর দাঁড়িয়ে সুরক্ষিত ভবিষ্যতের কারিগর হওয়াটা বর্তমানে খুবই আবশ্যিক। আমাকে আবার নতুন পথে বিজয়ী হতে হবে। আপনি যদি বিশ্ব-বিখ্যাত লেখক শিব খেরা এর ভক্ত হন এবং যদি বিশ্বাস করেন "বিজয়ীরা ভিন্ন কিছু করে না, তারা একটা জিনিস বিভিন্নভাবে করার চেষ্টা করেন" তাহলে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, আপনি তৎক্ষণাৎ ভাবতে শুরু করবেন, আপনি কিভাবে আপনার বর্তমান অবস্থা থেকে নিজেকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যায়।
আপনার মন ও মস্তিষ্কের সংমিশ্রিত এই উপলব্ধি যদি আপনার বর্তমান স্বাভাবিক জীবন যাপনের কিঞ্চিৎ পরিমানে নয় বরংচ ব্যাপকভাবে পরিবর্তন সাধন করতে সফলকাম হয় ক্রমান্বয়ে, তাহলেই পরিবর্তনের এই সমষ্টিগতরূপকেই আমরা আমাদের জীবনের সর্বোত্তম আত্ম-উপল্বদ্ধি বলে দাবি করতে পারি।_
"যে ব্যক্তি নিজের সম্পর্কে যত বেশি জানে, সেই ব্যক্তি তত জ্ঞানী"। আমাদের ভদ্র সমাজ যা খুঁশি বলুক না কেন, আমাকে যদি দিনমজুরী করেও আমার আত্ম-উপল্বদ্ধির প্রতি সদাচরণ করতে হয়, তাহলে সেটাই সর্বোত্তম পন্থা। আপনাকে বিচলিত হওয়া যাবে না, ধৈর্য্য হারা হলে চলবে না, অঘাত আত্মবিশ্বাসের বিন্দু পরিমান কমতি হতে দেয়া যাবে না, লক্ষ্যে অবিচল থেকে নিজের শ্রম এবং বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরনেই, একজন প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তির উদাহরন।
আত্ম-উপল্বদ্ধি আমাদের স্বাভাবিক মানসিকতার যে সার্বিক পরিবর্তন সাধিত করে, তা সর্বদাই সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তিদ্বারা গ্রহনযোগ্যতা পায় এবং সমাদ্রিত হয়। কতিপয় ব্যক্তিবর্গ যদি বিরোধিতার আলোচনা করেন, তাহলে বুঝবেন ওই ব্যক্তির এখন অবধি কোন প্রকার আত্ম-উপল্বদ্ধি হয় নাই।
জীবন সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত, নিজেকে জ্ঞানী বলে দাবিও করছি না। সম্প্রতি আমি আমার মাঝে মানসিকতার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছি, যার পিছনে দায়ি আমার জীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেটা আমি আমার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে আমার বিবেকের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে তার আবশ্যিকতা উপলব্ধি করতে পেরেছি। তাই হয়তোবা আপনার সাথে শেয়ার করার চরম ইচ্ছে জাগ্রত হলো।
Every Photo are Taken By:@shadonchandra
With My @Xiaominote9pro Handset.
THANKS FOR BEING WITH ME