বাজারের মাঝে রাস্তার একপাশে একটা চুলা।তার উপর কড়াই এ "ডালভুড়ি" ভাজা হচ্ছে।ডালভুড়ি হচ্ছে ডাল আর পেয়াজ মরিচ দিয়ে বানানো এক ধরনের ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার।
কাছে গিয়ে দেখলাম ডালভুড়িওয়ালাটা আমার পরিচিত।সেই ছোট সময় থেকে দেখে আসছি ওনি ডালভুড়ি বিক্রি করে।
দোকানে প্রচুর ভীড়।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দশ টাকার ডালভুড়ি কিনলাম।তারপর মনে মনে ভাবতে লাগলাম আহারে আজীবন লোকটা কষ্ট করে ডালভুড়ি বিক্রি করে গেলো,এতো যে বিক্রি হয় তারপরও জীবনে কিছু করতে পারে নাই।যদি করতে পারতো তাহলেতো আর এই কাজ এখনও করতো না।
পাশে একজন বুড়া লোক বসে ডালভুড়ি খাচ্ছে।তাকে বললাম,এই লোককে ছোট থেকে দেখি ডালভুড়ি বিক্রি করে,এখনও এই কাজই করে।ওনারতো দেখি সব সময়ই ব্যবসা ভালো। ডালভুড়ির দামতো বেশি।তারপও টাকা-পয়সা জমাতে পারে নাই?
বুড়া লোক বললো,বলো কি,কিছু করতে পারে নাই মানে।তুমি এলাকায় থাকো না তাই জানো না।ওনি এই ডালভুড়ি বিক্রি টাকা দিয়ে তিন ছেলেকে অনার্স-মাস্টার্স পড়িয়েছেন,বাড়িতে পাকা দালান বানিয়েছেন,জমি কিনেছেন অনেক।ছেলেরা এখন প্রতিষ্ঠিত।টাকার অভাব নেই তার বর্তমানে।
আমি বললাম,তাহলে ওনি এই বুড়া বয়সে এখনও এই আগুনের তাপ সহ্য করে রাস্তার পাশে বসে ডালভুড়ি বিক্রি করে কেনো।ওনিতো এখন আরাম করতে পারেন।
বুড়া লোকটি বললো,বাপরে এই জন্যইতো এই সামান্য ডালভুড়ি বিক্রি করে ওনি এতো কিছু করতে পেরেছেন।ওনার তার কাজের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাবোধ আছে।যে কাজই করো না কেনো,সেই কাজ সর্বোচ্চ মনোযোগ,পরিশ্রম,সততার সাথে ধৈর্য ধরে করে যেতে থাকলে সফলতা আসবেই।সে কাজ যত ছোটই হোক না কেনো।ডালভুড়িওয়ালা বলে কি জানো,এই ডালভুড়ি বিক্রি যত ছোট কাজই হোক না কেনো,এই ডালভুড়ি বিক্রি করেই আমি এতো কিছু পেয়েছি,মরার আগ পর্যন্ত আমি ডালভুড়ি বিক্রি করবো,যদিও এখন ডালভুড়ি বিক্রির কোনো প্রয়োজন নেই আমার।
কতো লোকইতো তার সাথে ডালভুড়ি বিক্রি শুরু
করেছিলো,কেউ ঠিকে থাকতে পারেনি।পারেনি কারণ তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো না,ধৈর্য ছিলো না।আর তিনি ধৈর্য ধরে চালিয়ে গেছেন।
আর ধৈর্য ধরে লড়ে যাওয়ার কারণেই ওনি আজ এতো কিছু অর্জন করতে পেরেছেন।
আমি এসব শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম।এমন অনেক কে দেখিছি বড় ব্যবসা করেও এতো সম্পদ অর্জন করতে পারেনি।আর ওনি এই সামান্য রাস্তার পাশের খাবারের দোকান দিয়ে এতো কিছু করেছেন।আসলেই ধৈর্য ধরে পরিশ্রম করে গেলে সফলতা একদিন নিশ্চয়ই আসে যদি উপরওয়ালা চায়।