
এইচ এস সি পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আমি ঢাকায় আসি।তখন বড় আপা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বড় আপা মেসে থাকে।আমি ঢাকায় আসব তাই বড় আপা আগে থেকেই একটা আলাদা রুম নেয়। বড় আপা লেখাপড়ার পাশাপাশি কয়েকটা টিউশনি করে আর একটা এনজিওর স্কুলে পড়ায়।বড় আপা আমাকে দুটি টিউশনি করতে দিয়েছে।আমি টিউশনি গুলোকরি, সামনে ভর্তিপরীক্ষা তাই পড়ালেখা করি আর সংসারে টুকিটাকি কাজ করি।ভালো চলছিল। তখন মাত্র শীতকাল শুরু হচ্ছে। হঠাৎ বড় আপার জ্বর আসল।নাপা খাওয়ার পর জ্বর কমে গেল।
দুই দিন পর আবার জ্বর আসল।সেদিন বড় আপার পরিক্ষা ছিল। সকালে পরিক্ষা দিয়ে একটা টিউশনি করে বাসায় এসে খেয়ে স্কুলে গেল।ওর স্কুল ২টায়।স্কুল থেকে একটু তাড়াতাড়ি চলে আসল।এসে আমাকে বলল আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে।বলে শুয়ে পড়ল।ওর শরীরে কাঁপুনি উঠলো। আমি কাঁথা দিয়ে ওরে চাপ দিয়ে ধরে রাখলাম। কাঁপুনি কিছুতেই থামছে না।আমাদের পাশের বাসার ভাবি আমাদের খুব আদর কর। আমি ওনাকে ডেকে আনলাম। ওনি আপাকে নিয়ে কাছাকাছি একটা ক্লিনিকে গেলেন। ঢাকায় তখন আমাদের একমাত্র অভিভাবক বড় মামাত ভাই।যাকে আমরা দাদা বলে ডাকি।আমি দাদা কে ফোন করলাম।দাদা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকে। ২ঘন্টা পর দাদা এসে পৌঁছালো। চিকিৎসার পর আপা একটু ভালো তাই বাসায় নিয়ে এলাম।
মধ্য রাত থেকে আপা আবার অসুস্থ বোধ করছে।ক্রমে তা বাড়তে লাগল।আপার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।ভোর হতেই দাদা ছুটল এম্বুলেন্স এর খুঁজে। কিন্তু এম্বুলেন্স পাচ্ছে না।পরে বাধ্য হয়ে টেক্সিতে করে আপাকে নিয়ে বের হলাম পিজি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। আপাকে অক্সিজেন দেওয়া দরকার কিন্তু এটা এম্বুলেন্স নয় যে অক্সিজেন থাকবে। আপা কষ্টে ছটপট করছিল।
প্রিয় জনের বিয়োগ কষ্ট,আর আপনার প্রিয় মানুষটা যখন আপনার চোখের সামনে জীবন মৃত্যুর মাঝখানে ছটপট করবে,যেকোনো সময় যা কিছু হয়ে যেতে পারে কিন্তু আপনার কিছুই করার নাই।নির্জীব পাথরের মত তারই পাশে বসে থাকা লাগে,সে যে কি নিদারুণ যন্ত্রণা তা লিখে প্রকাশ করার মত শব্দভাণ্ডার এখনো হয়ত সৃষ্টি হয়নি।যাই হোক অনেক কষ্টে পিজি হাসপাতালে পৌঁছালাম।সেখানে ইমার্জেনসি বিভাগে দেখার পর আপাকে ডাক্তার ভর্তি করতে বলল।এতেও বিপত্তি পিজিতে বিছানা খালি নেই।ডাক্তার এবার রেফার করলো বাংলাদেশ মেডিকেল।আবার দাদা এম্বুলেন্স এর খুঁজে।কিন্তু এম্বুলেন্স সংকট মূহুর্তে এতো সোনার হরিণ।অতপর সিএনজি করে আপাকে নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেলে পৌঁছালাম এবং মহান সৃষ্টি কর্তার করোণায় ৫দিন পর আপাকে সুস্থ করে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
আমাদের পাশের ফ্লাটে সেতু ভাই বলে মধ্য বয়সী একজন লোক থাকত।পরিবার গ্রামে থাকে।তিনি ব্যবসার জন্য এখানে একা থাকতেন।হঠাৎ একদিন ওনার জ্বর আসল।প্রথমে নাপা খেলেন তারপর ডাক্তারের কাছ থেকে বলে ঔষধ এনে খেলেন।এভাবে এক সপ্তাহ চলে গেল।তারপর ও যখন জ্বর সারছেনা তারপর কোভিট টেস্ট করালেন।কোভিট পজিটিভ। এভাবে আরও ৩ দিন চলে গেল।সামান্য শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে গেলেন। ডাক্তার দেখে কিছু ঔষধ দিয়ে বললেন বাসায় চলে যেতে তেমন কোন সমস্যা নাই।তিনি বাসায় চলে আসলেন।পরের দিন পানি গরম করতে রান্নাঘরে গেলেন । সেখানে পরে গেলেন। এম্বুলেন্স কল করা হচ্ছে। এম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছেনা।কোভিট এর রোগী এম্বুলেন্স ছাড়া নেওয়া সম্ভব নয়।দুই ঘন্টা পার হয়ে গেছে তখন ও পালস চলছিল।অতপর সারে তিন ঘন্টা পর এম্বুলেন্স নামের দুষ্প্রাপ্য যান আসল কিন্তু ততক্ষণে সেতুভাই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।
এছাড়াও আমি দেখেছি এমন অনেক গর্ভবতী মহিলা প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে অথচ এম্বুলেন্স না পেয়ে ভেনে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
এম্বুলেন্স এর দৃশ্যপট সর্বত কেমন আমি জানিনা। তবে আমি যতবার দেখেছি ততবার একি ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখছি। তাই এম্বুলেন্স নিয়ে আমারএকটায় প্রশ্ন যেকোনো ইর্মাজেন্সিতে যদি এম্বুলেন্স না পাওয়া যায় তবে এম্বুলেন্স ফ্রি থাকে কখন?এটা কি শুধু লাশবাহী যান?