আজ সকাল সকাল বউ রুটি বানাচ্ছে। রুটি যে খুব একটা সুন্দর গোল বানাতে পারে তা কিন্তু না। নতুন বিয়ে সুন্দর বানানোর চক্করে অনেক সময় লাগাচ্ছে। এদিকে পেটের ভিতর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এই অবস্থায় নিজেকে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী আবিষ্কার করলাম। আসলে মাহফুজ ভাই যদি বাংলার সেরা শিল্পী হতে পারে তাহলে আমি কেন হতে পারবো না। যেই আবিষ্কার সেই পরীক্ষূলক শুরু করে দিলাম। ঠোঁট দুটো গোল গোল করে দাঁতে দাঁত চেপে-
"গোওওওল, গোল রুটি দা......ও।
রুটি দাও,
রুটি দা.......ও,
ওগো গোল রুটি দা......ও।
পেটোরো ভিতোরো ত্রাহি ত্রাহি.....ই
কখন পাবো আমি জলা পোড়ি রুটি.....ই"
বউ ওমনি রুটি ব্যালনা নিয়ে হাজির।
-খুব গান গাওয়া হচ্ছে, তাই না। আজ রবি গুরু বেঁচে থাকলে তোমার গান শুনে জোড়াসাঁকোর বাঁশ খুলে পিটাতেন 🤣
আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভালো দেখা যাচ্ছে না। রুটির আগে ব্যালনার মাইর খাইতে রাজি নই তার আগেই পরিবেশ শান্ত করতে হবে। তড়িঘড়ি করে শুর তুলে ফেললাম-
"আমার ও পরাণ ও যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই গো। তোমা ছাড়া আমার এই জগতে কেহ নাই গো, কেহ নাই।"
রুটি চলে এসেছে, রুটির চেহারা যাই হোক কিছু বলার আর সাহস পেলাম না।
তারাতারি খেয়ে আমি অফিসে যাওয়ার জন্য বার হচ্ছিলাম। নতুন পাঞ্জাবি পরে। ঠিক ফেসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রোলিং করতেই এক নেতার পেজ সামনে চলে আসলো। ১৫ আগস্টে ১৫ টি ছবি আপলোড করেছে। আজ ১৫ আগস্ট তাই তিনি সাদা পাঞ্জাবী কালো কোর্ট চোখে কালো সানগ্লাস হাতে রোল্যাক্স এর ঘড়ি, ঘড়ির ব্যাল্ট ও কালো। সব কিছুই শোকাহত আগস্টের জন্য ম্যাচ করে পরেছে। একটা ছবিতে পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে। চারিদিকে রমনীরা ঘিরে আছে। তবে উনি যথেষ্ট রোমান্টিক। ললনাবেষ্ঠিত ওনার ছবি গুলো দেখলেই বোঝা যায়। বেপার সেপারে আলাদা। একটা আভিজাত্য ভাব আছে।
তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। ওনার এক্সপ্রেশনে সমস্যা। প্রতিটা ছবিই হাসি মাখা মুখ। হাসি মাখা মুখ দেখে মনে হচ্ছে সদ্য প্রেমে পরা ১৮ বছরের কোন এক কিশোর দুরু দুরু উত্তেজনা বুকে নিয়ে প্রথম বার প্রেমিকার সাথে ডেটে যাচ্ছে। দেখা হওয়ার প্রথম মুহুর্তে ল্যাদা ল্যাদা
আবেগ সামলাতে না পেরে হয়তো দুজন দুজনকে ঝাপটে ধরে ফেলতে পারে। বলা যায় না এই সময় টা বর রহস্যময়।
তার এই ছবি গুলো দেখে আমি মিটিমিটি করে হাসছিলাম। হাসতে হাসতে গিন্নির চোখে চোখ পরে গেলো। সে যে দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সাহিত্যের ভাষায় তাকে বলে অগ্নিদৃষ্টি। অগ্নিদৃষ্টির অগ্নিতে ভস্ম হওয়ার আগে আমি দ্রুতোই সাটকি কাটলাম -
রাস্তায় যেতে যেতে কানে সেই ৭১ এর তেজোদীপ্ত কন্ঠে ভেষে আসছে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমিও ভাবলাম আজকের দিনে কমপক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ফুসবুকে অন্তত একটা স্ট্যাটাস দেওয়া উচিত। তা নাহলে দেশ প্রেমের প্রতি একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। আর যদি ল্যাদা ল্যাদা আবেগ দেখায়া যদি একটু পোস্ট দিতে পারেন তাহলে বাঙ্গালী ভালোই খায়। তাই আজকের দিনের জন্য আমার কাছে এর থেকে ভালো বক্তব্য আর খুঁজে পেলাম না-
"খবরের কাগজে পড়বার কিছু থাকে না, এক ঘেয়ে সংবাদ। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব কি বললেন, কি করলেন, কোথায় গেলেন, কার সাথে দেখা করলেন, দেশের উন্নতি, অগ্রগতি, গুদাম ভরা খাদ্য, অভাব নাই, বিরাট বিরাট প্রজেক্ট গ্রুহণ করা হয়েছে, কাজ শুরু করা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
কেহ কেহ মুরুব্বিয়ানাচালে দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেটও দিয়ে থাকেন। দুনিয়ায় নাকি পাকিস্থানের সন্মান এতো বেরে গিয়েছে যে আসমান প্রায় ধরে ফেলেছে। নানান বেহুদা প্রশংসা, তবুও তাই পড়তে হবে।" - শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা।
এবার মুজিব বর্ষ কত যেন টন আতসবাজি দিয়ে শুরু হলেও শোকাহত আগস্টে কাঙগালিভোজ নাকি হয় নিই। বিরিয়ানির প্যাকেট আর খিচুড়িও নাকি দেওয়া হয় নিই। জিলাপি আর খুরমা দিয়েই নাকি বিদায় দিয়েছে নেতা কর্মীদের।
বল্টু বিরিয়ানির প্যাকেট না পাওয়ায় ক্ষোভেই বলেই ফেললো - পাকিস্থান কি কাসাম, আওর কাভি বিরিয়ানি নেহি খায়েঙ্গে।।