(বাংলাদেশের একটি প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে আমার নিজের তোলা চিত্র)
রাজামশাই একবার গোপালকে জিজ্ঞাসা করলেন: বল তো গোপাল, টাকা কিরকম বস্তু?
গোপাল তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল: রাজামশাই, টাকা হলো গোল।
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, কিভাবে?
গোপাল বলল, পৃথিবীতে টাকার জন্য যত শোরগোল। টাকা থাকলে হট্টগোল, না থাকলে গন্ডগোল। টাকার জন্য মানুষ পাগোল। তাই বলছি, টাকা হল গোল।
রাজামশাই হাসতে হাসতে গোপালের দিকে একটা গোল স্বর্ণমুদ্রা ছুড়ে দিলেন।
হাস্যরসের আড়ালে সত্য কথা সহজে বলে দিতেন গোপাল ভাঁড়
যদিও গল্পটা কাল্পনিক কৌতুক। তবে বাস্তবতা হলো, টাকা আসলেই গোল। চাকার মতো গোল।
আর তাই টাকার গাড়ি চলতে থাকে। ঘুরতে থাকে এই হাত থেকে ওই হাতে। এই চলমান প্রক্রিয়াকে অর্থনীতির ভাষায় বলে মানি সার্কুলেশন (money circulation)। আমি বলি ঘুঁটা ।
বিষয়টা একটা উদাহরন দিয়ে ব্যাখ্যা করি। ধরেন, আপনি চাকরি করেন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে। কোম্পানি আপনাকে মাস শেষে টাকা দেয়। সেই টাকাটা আপনি হয় খরচ করেন কোন কিছু কিনতে; নয়তো সঞ্চয় করেন ব্যাংকে ডিপিএস হিসেবে।
আপনি যখন কোন খাদ্য কিনেন, টাকাটা ব্যবসায়ীর হাতে যায়। সেই ব্যবসায়ী টাকাটা পাইকারি বিক্রেতাকে দেয়। পাইকারি বিক্রেতা সাপ্লায়ারকে দেয়। সাপ্লায়ার টাকাটা বিল হিসেবে দেয় ইন্ডাস্ট্রি গুলোকে।
এই ইন্ডাস্ট্রিগুলোতেই আপনি আমি চাকরি করি। তারা সেই টাকাটাই আমাদেরকে ফিরিয়ে দেয় বেতন হিসেবে। তারা যখন ব্যাংক থেকে লোন নেয় তখন আমাদের সঞ্চিত টাকাটা আবার তাদের হাতে যায়..
অর্থাৎ আমার হাত থেকে টাকাটা ব্যবসায়ীর হাতে, ব্যবসায়ীর হাত থেকে ডিলার, ডিলার থেকে সাপ্লায়ার, সাপ্লায়ার থেকে ইন্ডাস্ট্রি, ইন্ডাস্ট্রি থেকে আবার আমার হাতে- একই টাকা বারবার ঘুরছে। এই ঘূর্ণনকেই অর্থনীতির ভাষায় মানি সার্কুলেশন (money circulation) বলে। আর আমি বলি ঘুঁটা থিওরী।
কোন একটা দেশের অর্থনীতিতে এই ঘুঁটা যত জোরে হয়, যত দ্রুত হয়; দেশের অর্থনীতি ততো দ্রুত এগোতে থাকে। কারণ এই প্রত্যেকটা হাতবদলের সময় কিছু কিছু ভ্যালু এডিশন হয়।
কোন একটা দেশের অর্থনীতিতে তখনই স্থবিরতা নেমে আসে, যখন এই টাকার ঘূর্ণন গতি কমে যায়। তাই একটা দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হলে একটা জোরে ঘুঁটা দিতে হবে।
এই ঘুঁটা দেয় মূলত এন্টারপ্রেনার অর্থাৎ উদ্যোক্তারা। এজন্য অর্থনীতিতে উদ্যোক্তাদের আলাদা মূল্যায়ন করা হয় এবং তাদেরকে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
Entrepreneurs are the driving force of an economy
করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে দেশগুলোর অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভর করবে টাকার এই ঘূর্ণনগতির উপর। যে দেশের অর্থনীতিতে এই গতি বেশি হবে, সেই দেশের অর্থনীতি তরতর করে এগিয়ে যাবে।
এখন বাংলাদেশের দরকার করোনাকালীন সংকট যত দ্রুত সম্ভব কাটিয়ে উঠে এই অর্থনৈতিক ঘুঁটা সচল রাখা, টাকার ঘূর্ণন গতি চলমান রাখা।
যদি সেটা পারে, তাহলে বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে।
আত্মকথনঃ
আমি ত্বরিকুল ইসলাম। সখের বশে ব্লগিং করি। ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ে আগ্রহী।
- Hive: My Blog
- LeoFinance: My Leo
- Dtube: My Tube
- 3speak: My Vlog
- Twitter: My Tweet
- FB: My Profile
- Pinmapple: My Tour
- TravelFeed: My Feed
"পড়াশোনায় ইঞ্জিনিয়ার। পেশায় শিক্ষক। নেশায় লেখক। সাবেক ব্যাংকার। পছন্দ করি লিখতে, পড়তে, ভ্রমণ করতে এবং জমিয়ে আড্ডা দিতে।"
জীবনটাকে অনেক অনেক ভালোবাসি