
বন্ধুরা,
জানি, আমার বয়স ৫৭ পেরিয়েছে এবং আমি বেশ কয়েকবার হেলথ চেক আপ করিয়েছি।
এই যেমন, ইউরিক অ্যাসিড, সুগার, কোলেস্টেরল সবকিছুর ভয় দেখিয়েছেন ডাক্তারবাবু।
এতএব ডায়েটিঙ। খাবেন না ডিমের কুসুম, বড় মাছ, খাসীর মাংস, সন্দেশ, ঘী, বাটার, বাঁধাকপি, টমেটো, পনীর ইত্যাদি ইত্যাদি।
যাঃ বাবা! তাহলে খাব কী? চিনি ছাড়া লিকার চা, ক্রীম ক্র্যাকার বিস্কুট, তেল ছাড়া পেঁপের তরকারী, সাদাটে ব্রয়লার মাংস আর টক দৈ??? ভাবলাম এর থেকে মরে গেলেই বা ক্ষতি কী??
ছাড়ুন তো মশাই!! সপ্তাহের আর ছ'টা দিন অখাদ্য ক্রীম ক্র্যাকার বিস্কুট, পেঁপের তরকারী আর চারাপোনার ঝোল খেতে পারি কিন্তু রোববার টা আপোষ আমি কিছুতেই করব না।

ঈশ্বর এই একটা দিন আমদের উপহার দিয়েছেন।
তাই যেটা করবেন সেটা হলো, সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে লুঙ্গি ফতুয়া বা পাজামা পাঞ্জাবী পরে বাজার যাওয়া। খবরদার!প্যান্ট শার্ট পরে বাজার যাবেন না, ওটা অসভ্যতা।
মোড়ের চায়ের দোকানের বেঞ্চে আরাম করে বসে খবরের কাগজটা খুলুন।
সঙ্গে একটা লেড়ো বিস্কুট আর ঘন লিকারে দুধ চিনি মেশানো চায়ে আওয়াজ করে চুমুক। গিন্নি ফোনে তাড়া দেবে, পাত্তা দেবেন না।🙄
এবার গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলুন।
সামনে ঝোলানো খাসীর সামনের পা থেকে কিছুটা আর সিনা বা গর্দান থেকে কিছুটা... বাড়ি গিয়ে হাঁক দেবেন...কই গো, চা দাও।
মনে রাখবেন বাকীদিন গুলো বিড়াল হলেও রোববার কিন্তু আপনি বাঘ।(আমি তো নিজেকে অন্তত তাই ভাবার চেষ্টা করি, সফলতার গ্যারান্টি নেই)!

যাইহোক,খাসীর মাংস দেখে বউ যদি আপনাকে ডাক্তারের উপদেশের কথা মনে করিয়ে দেয়...দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলবেন, বেশি জ্ঞান দিওনা, যা বলছি তাই কর।😏
মনে রাখবেন, শের ভুখা মর যাতা হ্যায়, লেকিন ঘাস নেহি খাতা..!
জলখাবারে ফুলকো লুচি, লঙ্কা ফোড়ন দেওয়া সাদা আলুর চচ্চড়ি সঙ্গে মুচমুচেি জিলিপি কিম্বা বোঁদে।
চিনি কম মিষ্টি খাওয়া আর তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গে প্রেম করা একই ব্যাপার।
এরপর আবার এক কাপ চা, একদম মালাই মার কে...এবার পাড়ার মোড়ে বসে রাজা উজির মেরে যখন বাড়ি ফিরবেন, গন্ধে ম ম করছে গোটা বাড়ি।
বাথরুমে ঢুকে স্নান করতে করতে গলা ছেড়ে গাইতে থাকুন, "ঠান্ডে ঠান্ডে পানিমে নাহানা চাহিয়ে...." চিন্তা নেই, আজকে আপনি গানকে সুরের বাঁধন থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

এবার মেঝেতে পাত পেড়ে খাওয়া। কাঁসার থালায় সাদা ঝরঝরে সরু চালের ভাত, ঝিরিঝিরি আলুভাজা আর বড় জামবাটিতে ধোঁয়া ওঠা মাংস।
শেষ পাতে ঘনযৌবনা চাটনি আর লাল দই। যদি সাহসে কুলোয় তাহলে বউ কে বলবেন হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে(যদিও সেটা করবার সম্ভবনা ০%, তবুও চেষ্টায় ক্ষতি নেই)।
ওটা প্রয়োজনীয় নয়, আলংকারিক, জাস্ট পুরনো মেজাজটা একটু ফিরিয়ে আনা (মেজাজটাই আসল রাজা....)।
খাওয়ার পর একটা মিঠাপাতি মুখে পুরে সিগারেট ধরিয়ে মোবাইল টা খুটখাট করুন। চোখের পাতা ঘন হয়ে আসছে...ঘুম আসছে...ঘুম আসছে " মিলন কি মসতি /ভারী আঁখো মে/ হাজারো সপনে/ সুহানে লিয়ে..."!!!
১)কোলবালিশ জড়িয়ে বিছানায় লম্বা ঘুম ।
২)এরপর বিকেলে যদি আর ঘুম থেকে সারাজীবন না ও ওঠেন...কোন আফসোস নেই।
এই তো জীবন।
