এ দুনিয়ার জীবনে যারা সফল, যাদের যশ, খ্যাতি, অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তির কোনো অভাব নেই, আমরা অবেচেতন মনেই তাদের অনুসরণ, অনুকরণ করার চেষ্টা করি। হোক সে ক্লাসের সেরা ছাত্র বা জনপ্রিয় খেলোয়াড়, তুখোড় অভিনেতা বা শীর্ষ ধনীব্যক্তি। এরা কীভাবে অবসর কাটায়? ঘরের কোণায় বসে মুভি-সিরিয়াল দেখে, ইউটিউবে পড়ে থেকে, ফেইসবুকে একটার পর একটা স্ট্যাটাস দিয়ে?

জাগতিক জীবনে সফল ব্যক্তিরা অবসর কাটাতে বেরিয়ে পড়ে পৃথিবীর পথে, ছুটে বেড়ায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কেউ সাগরে নৌকা ভাসায়, কেউ আকাশ থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়ে, কেউ পাহাড়ে চড়ে বেড়ায়, কেউ হাইকিং করে, সাঁতার কাটে, বই পড়ে, সাইক্লিং করে, পরিবার-আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটায়। অবসরে তারা নতুন নতুন জিনিস শেখে—কোনো নতুন ভাষা, কোনো নতুন প্রযুক্তি, রান্না বা অন্য কিছু। নেটওয়ার্ক বিল্ড আপ করে, চ্যারিটি ফান্ডের জন্য টাকা সংগ্রহ করে, কোনো জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়।
অবসর সময়কে শুধু নিছক “আনন্দ” আর “মজা” করার মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রোডাক্টিভ কিছু করার চেষ্টা করুন। সাঁতার, সাইক্লিং, বাইক চালানো শিখুন, রান্না করাটা শিখে নিন। মাইক্রোসফট অফিস খুব ভালোমতো শিখুন, ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং জানা খুব জরুরি; ধীরে ধীরে শিখে ফেলুন। টুকটাক প্রোগ্রামিং করা শিখুন, সুযোগ থাকলে ইলেক্ট্রনিক্স নিয়েও অল্পবিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করুন। মসজিদে স্বেচ্ছাশ্রম দিন, জনসেবামূলক কোনো প্রতিষ্ঠানে সময় দিতে পারেন (নারী-পুরুষের ফ্রি মিক্সিং হবার সম্ভাবনা থাকলে কোনো দরকার নেই)।
আল্লাহ্ (সুবঃ) বলেন,
وَاِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَكُمۡ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدۡخِلَ الۡجَـنَّةَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَمَا الۡحَيٰوةُ الدُّنۡيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ
Everyone is bound to taste death and you shall receive your full reward on the Day of Resurrection. Then, whoever is spared the Fire and is admitted to Paradise has indeed been successful. The life of this world is merely an illusory enjoyment.
“...আর সফলকাম তারাই যাদের দোযখের আগুন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। দুনিয়ার জীবনতো ছলনার বস্তু ছাড়া অন্য কিছুই নয়।”
(সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৮৫)
তাঁরাই প্রকৃত সফল ব্যক্তি (রাঃ) যারা এই ধুলোমলিন পৃথিবীতেই পেয়েছিলেন জান্নাতের সুসংবাদ। কেমন ছিল তাদের অবসর? কী কী করে তাঁরা কাটাতেন তাঁদের অবসর?
জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীদের (রাঃ) অবসর কাটত আল্লাহ্র (সুবঃ) যিকিরে, কুরআন তিলাওয়াতে, ইলম অনুসন্ধান আর ইলম অনুযায়ী আমল করায়। তাঁরা (রাঃ) ঘোড়া চালাতেন, তীরন্দাজি করতেন, কুস্তি করতেন, ভারোত্তলন, হাই জাম্প, লং জাম্পের অনুশীলন করতেন। যুদ্ধবিদ্যা চর্চা করতেন। তাঁদের মূল ফোকাস ছিল আল্লাহ্র (সুবঃ) যমিনে আল্লাহ্র (সুবঃ) দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। তাঁদের (রাঃ) মতো হবার চেষ্টা করুন।
হালের তুচ্ছ ছেলেমানুষি সেলিব্রিটি কালচার ছেড়ে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জেনারেশানকে, কুরআনের প্রজন্মকে আপনার রোল মডেল হিসেবে নিন। কুরআন পড়ুন, বুঝুন, দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে মনোযোগ দিন, তাওহিদ, আল ওয়ালা ওয়াল বারা, মিল্লাতু ইব্রাহিমের মতো দ্বীনের বেইসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা স্বচ্ছ করুন। নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগী হোন। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, অবসরে প্রোডাক্টিভ কাজ করতে গিয়ে যদি আপনার ওপর বাড়তি চাপ পড়ে অথবা উইকএন্ড চলে যাবার পরেও পুরো সপ্তাহের অবসাদ, গ্লানি দূর না হয়, তাহলে অবসরে বা উইকএন্ডে প্রোডাক্টিভ কাজ না করে শুধু রিল্যাক্স করুন।
আপনার প্রথম প্রায়োরিটি থাকবে পর্ন/হস্তমৈথুনের ফিতনাহ থেকে বেঁচে থাকা, প্রোডাক্টিভ কাজ করতে গিয়ে যদি দিন শেষে আবার পর্ন/ হস্তমৈথুনের জগতে ফিরে যান, তাহলে সেই প্রোডাক্টিভ কাজের কোনো দরকার নেই। কোনোমতেই চাপ নেয়া যাবে না। রিল্যাক্সড থাকতে হবে। ফোকাস রাখতে হবে আপনার প্রায়োরিটির ওপর। আপনি কি চান পর্ন/হস্তমৈথুন-আসক্তি থেকে বেঁচে থাকতে, নাকি চান না? যদি চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই কিছু স্যাক্রিফাইস (আপাতদৃষ্টিতে) করতে হবে, আপনার কোনো মেয়ে বন্ধু থাকা যাবে না, ফ্রি মিক্সিং এড়িয়ে চলতে হবে, গান শোনা যাবে না, আইটেম সং, মুভি সিরিয়াল থেকে দূরে থাকতে হবে। আপনি যদি শয়তানের এই ফাঁদগুলো থেকে দূরে না থাকেন, তাহলে দিনের পর দিন চেষ্টা করে যাবেন, কিন্তু আশানুরূপ ফল পাবেন না।
পর্ন/হস্তমৈথুন/চটিগল্পের আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার মনের জোর, আল্লাহ্র (সুবঃ) ওপর ভরসা করা আর তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া। কোনো বান্দা যখন আল্লাহ্র (সুবঃ) দিকে এক হাত এগিয়ে যায় আল্লাহ্ (সুবঃ) তার দিকে কয়েক হাত এগিয়ে যান। আপনি ভয়ঙ্কর একটা পাপ থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাচ্ছেন, শয়তানের তাঁবু থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন। তাহলে কেন আল্লাহ্ (সুবঃ) আপনাকে সাহায্য করবেন না? আল্লাহ্র (সুবঃ) ওপর ভরসা রাখুন। নাছোড়বান্দার মতো চাইতে থাকুন। আল্লাহ্ (সুবঃ) আপনাকে এই পাপ থেকে বাঁচাবেনই। মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। হৃদয়ের কথা শুনুন।অন্তর থেকে চাইলে একদিন না-একদিন পর্ন/হস্তমৈথুন/চটিগল্পের আসক্তি দূর হবেই হবে।
ইন শা আল্লাহ্।