আজ ১৫ই আগস্ট শুক্রবার, ১৯৭৫ সালের এই দিনে শহীদ হন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ও আত্মপরিচয় নির্মাণ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপাখ্যান। আদর্শ ও নীতিতে অটল ও অবিচল থেকে, মানুষের হৃদয়কে উজ্জীবিত করে তিনি সামাজিক শক্তির বিকাশ ঘটান। বাঙালির স্বপ্ন, ভাবনা, চেতনা ও লক্ষ্য ধারণ করে হয়ে ওঠেন জনগণের মুখপাত্র, বাঙালির জাতীয় চেতনার উন্মেষ, বিকাশ, ব্যাপ্তি, সফলতার মূল স্থপতি এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির অখণ্ডিত সত্তা ও শক্তির প্রতীক।
তাঁর আদর্শের চার স্তম্ভ ছিল জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। তিনি এই আদর্শ ধারণ, লালন ও চর্চা করেন আমৃত্যু। তাঁর বক্তৃতা ছিল “মাদকতায় ভরা বিস্ফোরক শব্দাবলির নিপুন বিন্যাস। নিপুন শিল্প।” যেনো “মন্ত্রোচ্চারণ”। যা বাঙালির হৃদয়কে সহজেই স্পর্শ, চেতনাকে সমৃদ্ধ ও শাণিত করে স্বাধীনতার সুপ্ত বাসনাকে জাগ্রত করে।
জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক এবং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনকে একীভূত করে বাংলাদেশের মানুষের চেতনাকে জাগ্রত করার মাধ্যমে মুক্তি ও স্বাধীনতার আকাঙক্ষাকে প্রবল আন্দোলনে রূপান্তর করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানের কারাগারে আটক থাকা সত্ত্বেও দেশে-বিদেশে এবং বাঙালির চেতনায়, বিশ্বাসে তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।
স্বাধীন দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি কথাও যেন আমরা ভুলে যেন না যাই। ভুলে যেতে নেই। জীবনের ৩০৫৩ টি দিন তিনি জেলে ছিলেন, তারুন্য ও যৌবন তিনি উৎসর্গ করেছেন আমাদের জন্য এই দেশের জন্য, সর্বোপরি নিজের প্রাণ দিয়েছেন সপরিবারে। এত বড় আত্মত্যাগ যে মানুষ করেছেন তাঁর ও তাঁর আদর্শের প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়া 'মনুষ্য' ধর্ম হতে পারেনা।
বঙ্গবন্ধু অনেকবার বলেছেন- “জল্লাদের কারাগার থেকে আমাকে মুক্ত করার জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য আমার ডাকে সাড়া দিয়ে কতো ভাই-বোন রক্ত দিয়েছে। বুকের রক্ত দিয়েই আমি একদিন তাদের রক্তের ঋণ শোধ করে যাব।” তিনি আরো বলতেন-”আমার মাথা কিনতে পারে, পৃথিবীতে এমন শক্তি কারুর নেই। চিরদুখিনী বাংলার দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে, শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সোনার বাংলা গড়তে গিয়ে আমাকেও হয়ত আলেন্দের ভাগ্য বরণ করতে হবে, মরতে হবে প্রতিক্রিয়াশীল আর ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে। কিন্তু আমি নতি স্বীকার করব না। মৃত্যু ভয়ে কম্পিত নয় আমার বুক”। বঙ্গবন্ধুর আশঙ্কা সত্যি হয়। আলেন্দের ভাগ্যই বরণ করেন। তিনি রক্ত দেন। তাঁর প্রাণ নেয় আন্তর্জাতিক ও স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এবং দলীয় ও দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নতি স্বীকার করেননি এবং কেউ তাঁর মাথাও কিনতে পারেনি। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেন- ”আমি আত্মগোপন করলে ওরা সমস্ত মানুষকে হত্যা করবে। আমি স্থির করলাম আমি মরব, দেশবাসী রক্ষা পাবে। আমি নেতা, দেশবাসীকে পরিত্যাগ করে আমি কেনো যাবো। যে মানুষ মরতে রাজি, কেউ তাকে মারতে পারে না।” খুনিরা শুধু বঙ্গবন্ধুর দৈহিক সত্তা কেড়ে নিয়েছে, মারতে পারিনি। তিনি বাংলাদেশের মানুষের অবিচ্ছিন্ন ধমনী-স্পন্দন। আমাদের হৃদয়ে, স্বত্তায়, চেতনায় চিরভাস্বর । তিনি অম্লান ও সূর্যের মতো দেদীপ্যমান। বঙ্গবন্ধু এক আদর্শের নাম। আদর্শের মৃত্যু নেই। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দর্শন, চলার পথ ও স্বপ্নই হবে বাংলাদেশের চালিকা শক্তি। আমরা তাঁর জীবনার্শ থেকে খুঁজে পাবো আত্মশক্তি।
৪৫ তম মহাপ্রয়ান দিবসে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকলের আত্মার চিরশান্তি প্রার্থনা করছি।