হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? আজকে আপনাদের নিয়ে যাবো শাপলার রাজ্যে! খুবই যত্ন করে যেন সুন্দর কিছু নকশি কাঁথা আঁকা হয়েছে বরিশালের সাতলা গ্রামে।
আসলে প্রতিটি বিল এক একটি নকশি কাঁথা! এখানে প্রতিটি বিলেই শাপলা ফোটে এবং বেশিরভাগ বিলেই শাপলার রমরমা অবস্থা। আমরা যখন গিয়েছিলাম গ্রামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের একটু গভীর, অগভীর বিলের দেখা পেয়েছি এবং প্রতিটা বিল ই লাল শাপলায় ভরপুর ছিল। বেশ কিছু বিলে সাদাস আপনার দেখা মিলেছে কিন্তু লাল শাপলার আধিপত্য ছিল বেশি।
আমরা দুইবার শাপলা গ্রামে গিয়েছিলাম এবং দুইবারই অক্টোবর মাসে গিয়েছিলাম কিন্তু শাপলার পরিমাণ খুব খারাপ ছিল না, আসলে শাপলা দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে মার্চ থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে। যখন বর্ষা থাকে তখন বেশি শাপলার দেখা পাওয়া যায়, বিশেষ করে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর।
সাতলা গ্রামে বেশ কয়েকটি বিল রয়েছে এবং প্রতিটি বিল ই শাপলার সময় শাপলা তে ভরপুর থাকে। আপনাকে নির্বাচন করতে হবে আপনি কিভাবে যাবেন আপনি দুই ভাবে বরিশাল যেতে পারেন এখন সবচেয়ে সহজ উপায় এখন পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে বাসে করে গৌরনদী চলে যাওয়া, সেখান থেকে ইজিবাইক অথবা মাহিন্দ্র কিংবা বাইকে চলেও ভ্রমণ করতে পারেন। গৌরনদী থেকে আপনার ৪০ মিনিটের মত সময় লাগবে শাপলার দেখা পেতে, যেহেতু গ্রামের রাস্তা খুব ভালো আশা করাটাই বোকামি কিন্তু খুব কষ্ট হবে না। যারা ভ্রমণ পিপাসু তাদের জন্য ৪০ মিনিটের ভাঙ্গা রাস্তা কোন ব্যাপারই না তারপরেও রাস্তা বেশি খারাপ ১০-১৫ মিনিটের, বাকি রাস্তা আপনি সুন্দরভাবে যেতে পারবেন। আর যারা নতুন যাচ্ছেন তাদের জন্য বলি একদম শুরু থেকে কয়েকটি বিল পড়বে, আরো ভালো আছে আসলে ব্যাপারটা সেরকম নয় কিছু কিছু জায়গায় আপনি নৌকা সহজে পাবেন কারণ ঐসব জায়গা পানি একটু গভীর আর বেশ কয়েকটি বিল আছে যেগুলিতে পানি অনেক কম তাই নৌকা দিয়ে ভ্রমন করতে পারবেন না। যদি মনে করেন যে ছবি তুলবেন তাহলে অগভীর যে বিলগুলি আছে সেগুলিও মন্দ নয় কিন্তু সে ক্ষেত্রে আপনাকে কাঁদায় নামতে হবে। এখানে কিন্তু অনেকে শাপলা চাষ করে থাকেন এবং যাদের মূল উদ্দেশ্য এগুলি বিক্রি করা। তাই না জেনে শাপলা না ছাড়াই ভালো, আর যেহেতু আপনার ঘুরতে যাচ্ছেন তাই শাপলা ছেড়া থেকে বিরত থাকুন, শখের বসে দুই একটি শাপলা নিতে পারেন কিন্তু শুধু শুধু ছিড়ে নষ্ট করবেন না।
একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন যে কোন ফুল যেগুলি গুচ্ছ আকারে ফোটে যেমন কাশফুল, কাশফুল কিন্তু একদম কাছ থেকে ভালো লাগে না একটু দূর থেকে দেখতে কিন্তু ভালো লাগে যখন বাতাসের দোল খায়! ঠিক তেমনি শাপলা আপনার একটু দূর থেকে দেখতে ভালো লাগবে। কাছে গেলে মনে হবে যে শাপলা কমে গেল একটু যাবেন মনে হবে যে সামনে আরো অনেক বেশি পরিমাণে শাপলা আছে! কিন্তু ওই জায়গায় গিয়ে আবার দেখবেন যে আরেকটু দূরে মনে হয় আরো বেশি শাপলা রয়েছে!! তাই আপনারা যারা নৌকায় ভ্রমণ করবেন তার নৌকাটাকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে সেখান থেকে দৃশ্য গুলো উপভোগ করবেন।
আর যেখানে আপনারা যাচ্ছেন সেটা কিন্তু গ্রাম, মানুষের বসবাসের জায়গা তাই নিজেদেরকে সংযত রাখুন। ব্যবহার ঠিক রাখুন। নৌকাতে ওঠার আগে অবশ্যই ঠিক করে দামাদামি করে উঠবেন আর কতক্ষণ থাকবেন সেটা আগে থেকে নির্দিষ্ট করে দেবেন।
বরিশালের মানুষ খুব অতিথি পরায়ন হয় তাই আপনারা চাইলে দেশি হাঁস বা মুরগি দিয়ে কোন একটি বাসায় রিকোয়েস্ট করে দুপুরের খাবারটি খেয়ে নিতে পারেন এখানে অন রিকোয়েস্টে লোকাল কারো বাসায় থাকতেও পারেন যদি আপনারা দেরি করে ফেলেন যেতে যেতে।
শাপলা দেখার সবচেয়ে ভালো সময় সূর্যোদয়ের আগে, অনেক ভালো লাগে, প্রকৃতি ঠান্ডা থাকে এবং খুব ভালো লাগবে। এই জন্য আপনি তখন কোন গেদারিং পাবেন না এবং যেহেতু কোনো নৌকা আপনার আগে যাবে না তাই সব দিকে আপনি শুধু শাপলা দেখতে পাবেন কারণ নৌকাগুলো যখন চলাচল করে তখন স্বভাবতই বিভিন্ন দিক থেকে রাস্তা তৈরি হয় ! যেই জায়গাগুলো দিয়ে নৌকা যায় সেই জায়গায় শাপলাগুলি নষ্ট হয়ে যায় তাই খুব ভোরে গেলে আপনার সবচেয়ে বেস্ট ভিউ পাওয়াটা সহজ হবে। এজন্য আপনি পছন্দ করতে লোকাল কোন আত্মীয় অথবা কোন রিকুয়েস্ট পেইং গেস্ট হওয়া এক রাতের জন্য।
ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে সারাদিনই বাস চলাচল করে এবং টিকেট সহজলভ্য! সায়েদাবাদ থেকে কিছুক্ষণ পরপরই সাকুরা এবং অন্যান্য বাস চলাচল করে, টিকেট অনলাইনে অ্যাভেলেবল।
কেউ যদি লঞ্চে যেতে চান সেটা বেস্ট অপশন হয় কারণ লঞ্চ গুলি বেশিরভাগই ফজর বা তার আগে পৌঁছে যায় এবং ওই সময়ে লঞ্চঘাট থেকে সরাসরি মাহিন্দ্র নিয়ে চলে যেতে পারবেন শাপলা বিলে।
অপরূপ গ্রামের পরিবেশ এবং শাপলার সমারোহ দেখে আপনাদের খুবই ভালো লাগবে, অবশ্যই সকালে যাবেন না হলে শাপলার দেখা পাবেন না কারণ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শাপলা কমে যেতে থাকে এর দুইটি কারণ এক- পর্যটক বাড়তে শুরু করে দুই- শাপলা বন্ধ হতে শুরু করে।
যে কোন সহযোগিতার জন্য আমাকে নক করতে পারেন।