ধরেই নিয়েছিলাম আমি হারিয়ে গেছি তোমার জীবন থেকে, কখনো ফিরবো না, দেখবো না তোমার কাজল মাখা চোখ জোড়া, দেখতে পাবো না আমায় দেখে তোমার দেওয়া মুচকি হাসি। শোভন শুয়ে শুয়ে ভাবতে ছিলো। জীবন বড়ই অদ্ভুত কোথা থেকে কোথায় দাড় করিয়ে দেয় বোঝাই যায় না। সেদিন যে বন্ধু ছিলো আজকে সে জীবনের পুরোটা দখল করে নিয়ে আছে। সেই বন্ধু আজ মন ভালো খারাপের কারন হচ্ছে শোভনের।
শোভন পঞ্চমতম রমজানে ক্লান্ত শরীর নিয়ে স্মৃতি মন্থর করছে, কেমন ছিলো আগের দিন গুলো আর আজকে কেমন। কতটা পেয়েছে করেছে আর কি হারিয়েছে। এতো সব হিসাব নিকাশ করতে গিয়ে শোভন থেমে গেলো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ক্যালকুলেশনে। সেটা হলো তার বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা এক লাইনেই গাঁথা। সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে কিছু মানুষের সার্বিক সহযোগীতার প্রয়োজন হয়। যারা মানুষের অনেক বড় বড় স্বার্থের উর্ধ্বে থাকে। একজন অন্যজনকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। সেই সহযোগীই ছিলো শোভনের জীবনে এখন পর্যন্ত পাওয়া অন্যতম অধ্যায়।
একটু গভীর ভাবে ভাবলেই চলে আসে বন্ধুত্ব এবং প্রেম আত্মিক সম্পর্ক। কিছু সম্পর্ক আমরা নিজেরা গড়তে পারিনা, আপনাআপনি হয়ে যায়। কিছু সম্পর্ক তৈরী হয় যা কখনো কল্পনাও করা হয় না। তেমনি একটি সম্পর্ক শোভনের জীবনেও এমন আচমকা একটা শক্ত সম্পর্ক তৈরী হবে সে কখনো ভাবেনি। সেদিন হঠাৎ অপরিচিতা এসে যখন সব পাল্টে দিল, সব নতুন করে রুম নিলো তার জীবনে।
সেদিন আমিও অভিমান করেছিলাম, কিন্তু কিভাবে বুঝবো যে তুমিও অভিমানে বিমুখী হয়ে আছো। আমি জানতাম না সত্যি, বিশ্বাস করো যদি জানতাম বা বুঝতে পারতাম আমি নিজেই নিজের অভিমান ভাঙিয়ে তোমার অভিমান ভাঙাতাম। সেদিন যখন তুমি চলে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলে এক মুহুর্তের জন্য হলেও আমার সব কিছু থেমে গিয়েছিলো। আমি তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম তুমি ছাড়া আমি একা হয়ে যাব। তুমিও জানতে তুমি মাঝখানে থেকে চলে গেলে আমি দূর্বল হয়ে পড়বো, তুমি শক্তি যা এখনো আছো। তবুও তুমি না বোঝার ভান করে চলে যেতে চাইছিলে। আমি আটকে রাখলাম, সত্যি বলতে তোমায় আমি তখন পর্যন্তও বুঝতে পারিনি তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো। তোমার অভিমান বুঝতে পারিনি, ভাবো কতটা অপদার্থ ছিলাম, তুমি অভিমান করে বলেছিলে তুমি আমার সাথে থাকতে চাও না, আর আমি রেগে গিয়ে ছিলাম, যেখানে আমার তোমাকে বলা উচিত ছিলো তোমায় কতটা ভালোবাসি সেটা বলা, শক্ত করে হাতটা ধরা, কিন্তু সেগুলো না করে তোমায় রিকুয়েষ্ট করতে ছিলাম, আমায় ছেড়ে যেয়ো না,যেখানে তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারো না। কতটা বোকা ছিলাম, ভাবলেই গালের কোন হাসি চলে আসে।
সেদিনের পর থেকে তোমায় বুঝতে খুব অসুবিধে হয়নি, তোমার ছোট্ট আবদার গুলো, অভিমান গুলো সহজেই বুঝি এখন। কতটা উন্নতি হয়েছে ভাবো। তোমায় দেখলে বরাবরের মতই আমার মন উচ্ছাসে ভরে উঠে। তোমার সাথে কথা বলতে প্রথম দিনের মতই এক্সসাইটমেন্ট কাজ করে, তোমার চোখের দিকে তাকালে বরাবরের মতোই থমকে যাই। জানোতো ভয় লাগে যদি কখনো হারিয়ে ফেলি আমি হয়তো অতলে ডুবে যাব। তবে যথেষ্ট বিশ্বাস নিয়ে হাতটা শক্ত করে ধরে আছি। বিশ্বাস রেখো।
এসব ভাবতে ভাবতে ইফতারের সময় হয়ে এসেছে, শোভন উঠে অজু করে পরিবারের সাথে ইফতার করতে বসলো।