ভূমিকা
ব্লকচেইন ও এর বেসিক বিষয়গুলো নিয়ে আগের বেসিক পোস্টে কথা বলেছি । আজকে শুধুমাত্র হাইভ ব্লকচেইন (Hive Blockchain) এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট উইটনেস (Witness) নিয়ে লিখব। গত পোস্টে (ব্লকচেইন এর বিস্তারিত- তে) এটা বলেছি যে, হাইভ ব্লকচেইন অন্য অনেক ব্লকচেইন থেক অনেকটা আলাদা এবং অনেক আধুনিক ও গুছানো । কিভাবে এটা অন্য ব্লকচেইন থেকে আলাদা এবং উইটনেস কি ও ব্লকচেইনে এদের কাজ কি এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়েই আজকের বেসিক সিরিজে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
হাইভ ব্লকচেইন কিঃ
হাইভ ব্লকচেইন হচ্ছে একটা বন্টিত ডাটাবেজ ও এই ডাটাবেজে রক্ষিত সকল পোষ্ট, ভোট, রিওয়ার্ড, লেনদেন ইত্যাদি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের লেজার যা কিনা যে কেউ সহজে অ্যাক্সেস করতে পারবে অর্থাৎ পাবলিক। এখানে যেমন পোস্ট কমেন্ট এর যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত হয় পাশাপাশি লেনদেন সংক্রান্ত এবং রিওয়ার্ড এর যাবতীয় কার্যক্রমও সংরক্ষিত হয়। পূর্বের পোস্টে ব্লকচেইন সম্ভন্ধে লিখেছি যা আগে পড়ে আসা উচিৎ। লিংকঃ সহজ ভাষায় ব্লকচেইন ও ডিজিটাল কারেন্সি
অন্য ব্লকচেইনের সাথে হাইভের মৌলিক পার্থক্যঃ
অন্যান্য স্বনামধন্য blockchain সাথে hive এর পার্থক্য বুঝার জন্য কয়েকটা টার্ম একটু বোঝা দরকার।
Proof of Work (প্রুফ অফ ওয়ার্ক):
কিছু ব্লকচেইন এই পদ্ধতিতে কাজ করে যেখানে কিছু ক্রিটিকাল ম্যাথমেটিক্যাল প্রবলেম সলভ করার ব্যবস্থা করা হয় অর্থাৎ অ্যালগোরিদমে ম্যাথমেটিক্যাল প্রবলেমস সেট করা থাকে এবং যারা তাদের পিসির মাধ্যমে এই ম্যাথমেটিক্যাল প্রবলেম আগে সলভ করতে পারবে তারা এই ব্লকচেইনের লেনদেন ও অন্যান্য কাজটি আগে সম্পন্ন করতে পারবে । তাই তাদেরকে এর জন্য (অর্থাৎ ব্লক প্রডিউস এর জন্য) রিওয়ার্ড হিসেবে দেয়া হবে যাকে অনেক ব্লকচেইন এর ভাষায় মাইনিং বলে থাকে।
Proof of Stake (প্রুফ অফ স্টেক):
এই পদ্ধতিতে ম্যাথমেটিক্যাল প্রবলেম সলভ করা নয় বরং সেই ব্লকচেইনে যাদের ইনভেস্টমেন্ট অনেক বেশি অথবা অনেক টোকেন স্টেক করা রয়েছে তারা ব্লক তৈরি করতে পারবে। এবং ম্যাথমেটিক্যাল সমস্যা সমাধান করা ছাড়াই তারা ট্রানজেকশন গুলো রেকর্ড করতে পারবে ফলে তাদেরকে রিওয়ার্ড দেয়া হবে ব্লক প্রডিউসার হিসেবে।
Delegated Proof of Stake (ডেলিগেটেড প্রুফ অফ স্টেক):
অন্যদিকে হাইভের ক্ষেত্রে আমরা যেটার কথা বলছি সেটা হচ্ছে ডেলিগেটেড প্রফ অফ স্টেক। এটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি যেখানে প্রুফ অফ স্টেক-কে আরও আপডেট করা হয়েছে। এখানে যারা বেশি পরিমাণ ইনভেস্টরস নয় বরং যাদেরকে এই ব্লগে সবাই পছন্দ করবে তারাই কেবল মাত্র ব্লগ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করতে পারবে। আর এদেরকে বলা হয় উইটনেস যারা এখানকার সাধারন ব্যবহারকারীদের ভোটে নির্বাচিত হয়। অনেক বেশি ইনভেস্ট করলেই এখানে উইটনেস হতে পারে না বরং উইটনেস হওয়ার জন্য সবার আস্থা ও সমর্থন দরকার।
এজন্য এভাবে করে বলা হয়ঃ
Hive is based on a new state-of-the-art blockchain technology called Graphene, which uses "witnesses" instead of "miners" to produce blocks.
আমি আগের এ সংক্রান্ত ব্লগে বলেছিলাম যে এই সিস্টেমটা অত্যাধুনিক, সময়োপযোগী এবং ডিসেন্ত্রালাইজড কারণ কেউ এখানে নিজস্ব সংস্থার মাধ্যমে কিছুই করতে পারবে না । তাকে যদি সবাই পছন্দ করে এবং তার কন্ট্রিবিউশন ভালো লাগে তাহলেই তাকে ভোট দিবে এবং সে টপ ২০+১ =২১ এর মধ্যে থাকতে পারলেই এখান থেকে ব্লক প্রডিউসার হিসেবে অর্থাৎ উইটনেস হিসেবে ব্লক তৈরি করতে পারবে।
আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে ব্লক প্রোডিউসারদেরকে অন্যান্য ব্লকচেইন-এ নতুন টোকেন বা কারেন্সির ১০০% বুঝিয়ে দেয়া হয় কিন্তু এখানে ব্লক প্রোডিউসারদেরকে মাত্র ১০% দেয়া হয়। তাহলে নতুন যে টোকেন ব্লকচেইনে নতুন করে ভ্যালু এডিশন এর মাধ্যমে তৈরি হল, তা থেকে 10% উইটনেস কে দেওয়ার পর বাকি 90% কিউরেটর, অথর এবং যারা পাওয়ার আপ করে রেখেছে তাদের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউট করা হয়। আর এজন্যই এটা অনেক সুন্দর ও যুগোপযোগী পদ্ধতি । অন্যান্য ব্লকচেইনে এরকম সিস্টেম পাওয়া যায় না, অধিকাংশ ব্লকচেইন-ই মাইনারদের মাঝে নতুন টোকেন ডিস্ট্রিবিউট করে দেয়।
হাইভ ব্লকচেইনের কিছু সুবিধা ও বৈশিষ্টঃ
হাইভ ব্লকচেইন এ প্রতি ১ সেকেন্ডে একটি করে ব্লক প্রডিউস হয়, তাই ধারাবাহিকভাবে ২১ জন ব্লক প্রডিউসার (২০ জন মূল ও এক জন অপেক্ষমাণ) মিলে প্রতি এক রাউন্ডে অর্থাৎ ৬৩ সেকেন্ডে ২১ জন ব্লক প্রডিউসার ২১ টি ব্লক প্রডিউস করে থাকে। ২১ তম উইটনেস কে ব্যাকআপ হিসেবে ধরা হয় এবং এদের সবাইকেই ব্লগ প্রডিউসের জন্য নতুন জেনারেটেড টোকেনের ১০% ভাগ করে দেয়া হয়।
সকল ব্যবহারকারী প্রত্যেকে যে কোন ৩০ জনকে উইটনেস হিসেবে ভোট দিতে পারেন। সবার ভোটে প্রথম ২০ জন ব্লক প্রডিউস করতে পারবে। ডিসেন্ট্রালাইজড হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ এখন নিশ্চই বুঝতে পেরে গেছেন। সবাই মিলে যেহেতু উইটনেস কে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তাই কোন কেন্দ্রীয় মালিকানা নেই এবং এই ২০ জনই সব ধরনের বড় পরিবর্তন আনতে পারবে। এখানে সেরা ২০ জন উইটনেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা হোয়াইট পেপার এর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে পারবে, তারাই বিভিন্ন ধরনের হার্টফর্ড নিয়ে আসতে পারবে বা অনুমোধন দিতে পারবে এবং আরো অনেক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তারাই ভূমিকা রাখবে।
তাই ভালো উইটনেস দেখে তাদেরকে ভোট দেওয়াটা সকল হাইভ ব্যবহারকারীর একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিক যেভাবে করে গণতান্ত্রিক দেশে আমরা সরকার নির্বাচন করে থাকি যারা দেশ পরিচালনা করে । এখানে ঠিক সেভাবেই ভাল ব্যক্তিদেরকেই ভোট দিতে হবে যাতে তারা ব্লকচেইনে পজিটিভ ও ভালো ভালো পরিবর্তন আনতে কাজ করতে পারে। সার্ভার ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে ডাটা ম্যানেজমেন্ট সহ যাবতীয় কার্যক্রম তারাই পরিচালনা করে। আর যারা নিচের সারির উইটনেস তাদের কাজ হচ্ছে ওয়েটিং এ থাকা কারণ উপর থেকে কেউ যখন ড্রপ করবে তখন তারা এই কাজের সু্যোগ পাবে। 1 থেকে 100 এর মধ্যে যারা রয়েছে তাদের হয়তো বা মাঝে মাঝে দিনে একটি ব্লগ প্রডিউস করার পসিবিলিটি আসতে পারে।
ছবিঃ বর্তমান উইটনেস লিস্ট
ছবিঃ প্রথম উইটনেসের কিছু বিস্তারিত তথ্য
আবার এক উইটনেস অন্যকে ভোট দিতে পারে না তাই এর মাধ্যমে স্প্যাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে ট্রানজাকশন এর জন্য কোন ফি নেই। তাই এভাবে করে কোন সেন্ট্রাল পাওয়ার এখানে কাজ করে না এবং কারো একক সেনসর্শিপ বা কর্তৃত্ব এখানে প্রযোজ্য হয় না। তবে ডাটা অ্যাকসেস করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস বা ওয়েবসাইট রয়েছে যেখান থেকে ব্লকচেইনের ডাটাগুলো অ্যাক্সেস করা যায়। এজন্য বিভিন্ন এপস এর বিভিন্ন ধরনের ইন্টারফেস এর মাধ্যমে আমরা গেমস খেলা, ভিডিও আপলোড করা, পোস্ট করা, কমেন্ট করা, ভোট করা এবং ট্রানজেকশন এর কাজগুলো করতে পারি।
প্রত্যেক হাইড ব্যবহারকারী 30 জন উইটনেস কে ভোট দিতে পারবে আর ভোট দেয়ার জন্য নিচের লিংক এ গিয়ে ভোট দিয়ে আসতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে, প্রথম 30 জনকে আমরা যেন সবসময় ভোট না দিয়ে বরং আমাদের নিজেদের যাচাই বাছাই এবং এনালাইসিস থেকে যাদের কার্যক্রম ভালো লাগে এবং যাদেরকে অথেন্টিক ও ট্রাস্টেড মনে হয় তাদেরকে যেন আমরা ভোট দেই। কারন আমাদের প্রত্যেকের ভোটের মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হয় তারা ইনকাম যেমন করতে পারবে পাশাপাশি ব্লকচেইনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন অথবা যাবতীয় অনেক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
উইটনেস ভোট দিতে ক্লিক করুন
হাউস ব্লকচেইন এর যাবতীয় র ডাটা দেখার জন্য নিজের ওয়েবসাইট থেকে ডিটেইলস দেখে আসতে পারেনঃ
আবার ব্লকচেইন এর শুরুটা কিভাবে হল এবং হোয়াইট পেপার এর যাবতীয় শুরুর দিকের তথ্যাবলী নিচের লিঙ্ক থেকে দেখে নিতে পারেনঃ
@hiveio/announcing-the-launch-of-hive-blockchain
References:
@victoriabsb/faq-what-is-hive-and-how-does-it-work
https://hive.blog/faq.html#What_are_Hive_witnesses
হাইভের বেসিক বিষয়ের উপর আমার বাংলায় লেখা কিছু পোস্টঃ
নিচের কোন টপিক সম্বন্ধে জানার প্রয়োজন হলে পড়ে আসতে পারেন।
আমার অভিজ্ঞতা ও নতুনদের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা
গতানুগতিক সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে হাইভের পার্থক্য
হাইভ থেকে টাকা আয় করার উপায়গুলো কি কি
হাইভ একাউন্টের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় কী(Key) এর খুটিনাটি
হাইভে নামের পাশে যে রেপুটেশন (Reputation) দেখায় তা কি, কেন, কীভাবে হিসাব করা হয় ও গুরুত্ব বিস্তারিত
হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) নিয়ে বিস্তারিত
হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) এর মধ্যে পার্থক্যগত সম্পর্ক
রিসোর্স ক্রেডিট নিয়ে বিস্তারিত যা নতুনদের জানা জরুরী
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ১
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ২
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৩
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৪ ও শেষ পর্ব
হাইভে ডাস্ট কি ও কীভাবে তা সেভ করতে পারবেন
আমি কে
আমি বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন প্রভাষক এবং সদ্য বাবা। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি আমার বন্ধুদের এবং সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসি। ইউটিউব, ডিটিউব, হাইভে ব্লগিং করতে ভালবাসি। আমি শেয়ার করতে চাই ওইসবকিছু যা আমি শিখেছি যাতে মানুয আমার থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারে। আমি আমার ব্লগে টেক্সটাইল, অনলাইন আয়, ও নানান রকম আকর্ষনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস হিসেবে সবার থেকে শিখতে চাই ও এই কমিঊনিটির সাথে এগিয়ে যেতে চাই।
Upvote, Resteem and Follow me on hive @engrsayful
Find me on social media
Follow me on DTube
Follow me on Youtube
Follow me on ThreeSpeak
Follow me on Facebook
Follow me on Twitter